মানবসম্পদ গড়ার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

মানবসম্পদ গড়ার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা

ড. তরুণ কান্তি শিকদার |

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এককভাবে ২০০৩ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- 'রাষ্ট্র, (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।' দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ অর্জন করে স্বাধীনতা।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সোনার বাংলার নতুন প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করে তুলতে সংবিধানে বাধ্যতামূলক সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তার মতে, 'শিক্ষিত জনশক্তি দেশের সম্পদ। আমি বাংলাদেশে এমন শিক্ষার প্রসার চাই, যা দ্বারা প্রতিটি নাগরিক দেশের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।' জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতির পিতার স্বপ্ন ও এসডিজিস লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রূপকল্প নির্ধারণ করেছে 'সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা।'

আর অভিলক্ষ্য 'প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।' প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত ৯ বছরে উন্নয়নের পথে ব্যাপক সাফল্যগাথা রচিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিটি দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার। শিক্ষিত জাতি একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রার সফল বাস্তবায়নের পর সারাবিশ্ব এখন ২০৩০ সালে এসডিজিস চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৎপর। এই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিটি শিশুর জন্য জীবনব্যাপী ও গুণগত শিক্ষার বিস্তারণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার মূল লক্ষ্য প্রতিটি ভবিষ্যৎ নাগরিককে মানবসম্পদে পরিণত করা। বিগত নয় বছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই মন্ত্রণালয়ের গৃহীত গণমুখী উদ্যোগ এবং তার সফল বাস্তবায়ন করেছে। যেমন- প্রতি বছর বই উৎসব, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় বই মুদ্রণ, বিদ্যালয় জাতীয়করণ, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ইত্যাদি।

ড্রপ আউট এখন যেমন কমেছে, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষায় শিশু ভর্তিতে অগ্রগতি হয়েছে। বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৪৯৫টি বিদ্যালয় স্থাপন হয়েছে। ৫+ বছর বয়সী শিশুদের স্কুলের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালুকরণ সমপরিমাণ শিক্ষকের পদসৃষ্টি ও নিয়োগ দান সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির হার বৃদ্ধিকরণ, উপস্থিতির হার বাড়ানো, ঝরে পড়ার হার হ্রাসকরণ এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিড ডে মিল চালু করার ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের বিত্তবান অভিভাবকদের আর্থিক সহায়তায় সব বিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশু ভর্তির হার বৃদ্ধি, ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার প্রবণতা রোধ এবং ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণকল্পে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুধু দুটি (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ) উপজেলায় শুরু হয়। তখন মোট সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৬,৬৩৫ জন। বর্তমানে ৯৩টি উপজেলার ২৮ লাখ ৭৫ হাজার শিশুর মধ্যে প্রতি স্কুল দিবসে উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দৈনিক ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 'শিক্ষা মানুষের ভেতরের মানুষটিকে টেনে বের করে নিয়ে আসে।' শুধু জৈবিক প্রবৃত্তি ও দেহধারী একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। তাই ভাতৃহরি বলেছেন 'বিদ্যাবিহীন পশু'। শিক্ষাই একজন জৈবিক দেহধারী মানুষকে সম্পদে পরিণত করে। এ জন্য শিক্ষিত মানুষকে বলা হয় দ্বিজ বা দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণকারী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসব আয়োজন একজন প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার জন্য একটি সমৃদ্ধ দেশ উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই অগ্রযাত্রার সামগ্রিক বিষয়ে প্রধান নির্দেশক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার প্রতি তার বিশেষ আনুকূল্য ও সুদৃষ্টি প্রাথমিক শিক্ষায় সাফল্য অর্জনে সক্ষমতা লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার মতো স্বপ্ন দেখেন, দেশের প্রতিটি শিশু প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে। প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতি সাধিত হলে প্রতিটি মানুষ একদিন সম্পদে পরিণত হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাই সবার অগ্রগণ্য। আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ বিশ্বের দরবারে আরও আলোকোজ্জ্বল করে তুলবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। 

 

অতিরিক্ত সচিব

 

সৌজন্যে: সমকাল

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007800817489624