কেউ কিছু না দিলে চুলায় আগুন জ্বলে না অসহায় হাছিনা বেওয়ার। এই বয়সে নিজেকেই রান্না করে খেতে হয়। ৪০ বছর আগে স্বামী মারা যান। ছোট ছেলে মারা যান ১০ বছর আগে। বড় ছেলের অভাবের সংসার। দিনাজপুর জেলার নবানগঞ্জে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই পরিবার নিয়ে থাকেন। এক মেয়ে তার বিয়ে হয় দিনাজপুর জেলায়।
সবার কাছে বোঝা হয়ে যাওয়া হাছিনা বেওয়া তাই নিজ বাড়িতে ছোট একটি টিনসেট ঘরে খেয়ে না খেয়ে পরে থাকেন। যখন ক্ষুধা পায় অন্যের বাড়িতে চলে যান। কেউ সাহায্য না করলে সেই দিন পেটে ভাত যায় না তার। এমন চিত্র ধরা পড়ে সাংবাদিকের চোখে।
সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে কথা হয় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমর পুর ইউনিয়নের কিশামত দূর্গাপুর গ্রামের মৃত্যু খবির উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. হাছিনা বেওয়ার (৮০) সাথে।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কথা বলতেই তিনি বলেন, ‘করোনা বুঝি না বাবা। কি খামো বাবা? যার কাছে যাই তাই খালি কয় দেশত আকাল পড়ছে, মহামারি দেখা দিছে। এখন কি খায়া বাঁচে থাকমো বাবা? কেউ তো কিছু দিবার যায় চায় না।’ এই কথা বলে কান্না শুরু করেন হাছিনা বেওয়া।
তিনি বাঁচার আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘সবাই খালি বাড়িত থাকপের কয়, কেউ কিছু দেয় না। কি খায়া বাঁচি বাবা?’ অন্যের কাছে সাহায্যে নিয়ে দিন চলে তার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ যখন ঘরে থাকছে তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে হাছিনা বেওয়া ঘুরছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এক বেলা খাওয়ার আকুতি জানাচ্ছে সবার কাছে। তবুও মিলছে না কোনো সাড়া। আশির্ধ্ব বিধবা হাছিনা বেওয়ার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোনো সহযোগিতা। এমনকি বিধবা বা বয়স্ক ভাতার কার্ডও মেলেনি।
হাছিনা বেওয়ার প্রতিবেশী খাজা মিয়া বলেন, ‘হাছিনা বেওয়া এ পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাননি। ছোট ছেলে মারা গেছে, বড় দুই ছেলে হতদরিদ্র। তারা সবাই পরিবার নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে।’