সরকারিকরণের প্রক্রিয়া চলমান থাকায় ৬ মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। জনজীবন হয়ে পড়েছে স্থবির। এ পরিস্থিতিতে আরো বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। অধ্যক্ষ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় বিপদ আরো বেড়েছে বলে জানা যায়।
কলেজ ফান্ডে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা থাকলেও আজ বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানান শিক্ষকরা। তাই করোনার ক্রান্তিকালে কলেজ ফান্ড থেকে বেতন বকেয়াসহ পরিশোধের অনুমতি দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানটির ৫৯ শিক্ষক-কর্মচারী।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগরসহ ৩টি বিভাগীয় শহার ১১টি উচ্চ মাধ্যমিক মডেল বিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক দৈনন্দিক কার্য সম্পাদনের ব্যয় ছাড়া নিয়ােগ, পদোন্নতি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ও ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর একই বছরের ১০ ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, সরকারিকৃত মডেল স্কুল এন্ড কলেজটি খথাযথভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীরণের আগে পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধ অব্যাহত থাকবে। তবে গত ৬ মাস আগে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিষ্ঠান ফান্ডে সাড়ে ৫ কোটি টাকা থাকার পরেও তারা ছয় মাস যাবত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় শিক্ষকরা বাড়িভাড়া বাজার-সদাই শিশুখাদ্য যোগাড়সহ কিছুই করতে পারছেন না।
তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বোনাস পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকরা জানান, ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি এফডিআর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ ফান্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। সেই টাকা পুনরায় এফডিআর না করে বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশােধসহ বর্তমান বেতন-ভাতা, বৈশাখী ভাতা ও ঈদ বােনাস প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, জমানো টাকা থেকে কর্তৃপক্ষ চাইলে বেতন পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে তা হচ্ছে না। সভাপতি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শিক্ষক কর্মচারীরা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। অধ্যক্ষ একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হওয়ায় তার বেতন সরকারিভাবে পান। বর্তমানে তিনি প্রফেসর পদে প্রমোশন পেয়েছেন। কিন্তু তার সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানটির অন্য সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শিক্ষকরা বলেন, সরকারিকৃত কলেজটির অনেক শিক্ষক জমানো টাকা খরচ করছেন, যাদের জমানো ছিলো না তারা ধারদেনা, স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে মোটামুটি চলছেন। অনেক কর্মচারী লন্ড্রী দোকানে চাকরি করছে। বাসা ভাড়া, সংসার খরচসহ শহরে থাকার ব্যায় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে । লোক লজ্জার ভয়ে কেউ ত্রাণ বা অনুদান চাইতে পারছেন না।
মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন।