লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় কিরণ বালা বর্মনী নামে এক বৃদ্ধাকে জমির জন্য মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছেলে হেমন্ত বর্মণের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছেন কিরণ বালা। এদিকে মামলার সাক্ষী বৃদ্ধার মেয়ে জামাই, ভাতিজা ও আইনজীবীর সহকারীর বিরুদ্ধে উল্টো ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধা ছেলে হেমন্তর স্ত্রী। পুরো ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন প্রতিবেশী গেন্দুকুড়ি মহিলা কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকন। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে হাতীবান্ধা প্রেসক্লাবে এসব অভিযোগ করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কিরণ বালা বর্মনী।
ওই উপজেলার গেন্দুকুড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অমূল্য কুমার বর্মনের বিধবা স্ত্রী কিরণ বালা বর্মনী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘বৃদ্ধ বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খুবই কষ্টে জীবন-যাপন করছি। স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই কোনো রকমে দিন চলে। সেই টাকারও ভাগ চায় ছোট ছেলে হেমন্ত বর্মন। ভরণপোষণ দেয়া তো দূরের কথা, আমি কঠিন অসুস্থ হলেও সে কোনো প্রকার খোঁজখবর পর্যন্ত নেয় না। এর মাঝে গত ৩ আগস্ট হেমন্ত বর্মন আমার ১৫ শতাংশ আবাদি জমি দখলের চেষ্টা করে। বাধা দিলে আমাকে মারধর করে ছেলে হেমন্ত বর্মন ও তার লোকজন। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি করায়।’
কিরণ বালা আরও বলেন, ‘ছেলে হেমন্তকে দিয়ে আমাকে মারধরের ঘটনায় সকল প্রকার সহযোগিতা করেন গেন্দুকুড়ি মহিলা কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকন। এ ঘটনায় ৬ আগস্ট আমি বাদী হয়ে লালমনিরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মামলায় অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকন ও ছেলে হেমন্ত বর্মনসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আমার মেয়ে জামাই জগদীশ চন্দ্র ও ভাতিজা বসন্ত কুমার সাক্ষী হয়েছেন।’
কিরণ বালা অভিযোগ করেন, আদালতে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার জন্য ঐ অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকনের পরামর্শে আমাকে মামলা তুলে নিতে ও মামলার সাক্ষীদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখায় ছেলে হেমন্ত বর্মন। তাতে কাজ না হলে মামলা দায়েরের একদিন পর বুধবার মধ্য রাতে আমার ছেলে হেমন্ত বর্মনের স্ত্রী শৌব্বা রানী তাকে ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ তুলে মেয়ে জামাই জগদীশ চন্দ্র, ভাতিজা বসন্ত কুমার ও মামলার আইনজীবীর সহকারী মনোরঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় একটি অভিযোগ করে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বৃদ্ধা কিরণ বালার বড় ছেলে অনন্ত কুমার বলেন, গেন্দুকুড়ি মহিলা কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকন ওই এলাকায় আমাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। আমাদের বসত বাড়ি ও জমি দখলের চেষ্টা করছে হুমায়ুন কবির রোকন ও তার লোকজন।
তবে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির রোকন তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, কিরণ বালা ও অনন্ত কুমারের অভিযোগগুলো মিথ্যা-ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘তাদের মা-ছেলের পারিবারিক ঘটনায় উল্টো তারাই আমাকে এক নম্বার আসামি করে আদালতে মামলা করেছে।’
এদিকে হাতীবান্ধা থানার ওসি (তদন্ত) নাজির হোসেন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, শৌব্বা রানী নামে এক গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার যে অভিযোগটি করা হয়েছে, তদন্ত করে তা মিথ্যা মনে হয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এ ধর্ষণ চেষ্টার নাটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি (তদন্ত) নাজির হোসেন।