মার্চের এমপিও: মাদরাসা ও কারিগরি পারলে শিক্ষা অধিদপ্তর কেন ব্যর্থ ? - দৈনিকশিক্ষা

মার্চের এমপিও: মাদরাসা ও কারিগরি পারলে শিক্ষা অধিদপ্তর কেন ব্যর্থ ?

মনজিল মোরশেদ |

একই এজি অফিসের অধীনে তিনটি অধিদপ্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি গত ২৫ মার্চ তাঁর অধস্তনদের দিয়ে মার্চের এমপিওর (বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) চেক ব্যাংকে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করলেন। এই ডিজি মহোদয় কিন্তু শিক্ষক নন। দূরদর্শী এই অতিরিক্ত সচিব বুঝতে পেরেছিলেন সামনে সাধারণ ছুটি আরো বাড়তে পারে। তাই তার অধিদপ্তরাধীন শিক্ষক-কর্মচারীরা যেন সময়মতো বেতন-ভাতা তুলতে পারেন সেই দিকটা মাথায় রেখে ২৫ মার্চেই চেকগুলো ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একই কাজ করেছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়। তিনিও বাংলাদেশ সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনিও ২৫ মার্চেই চেকগুলো ব্যাংকে পাঠিয়েছেন। এই দুই অধিদপ্তরাধীন প্রায় পৌণে দুইলাখ এমপিওভু্ক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। গতমাসে বা তার আগের মাসে যে সময়ে পেয়েছে এবারও ঠিক একই সময়ে পাবেন।

একইভাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও আগেভাগেই ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং ১ ও ২ এপ্রিল চার লাখের বেশি শিক্ষকের বেতন ও বৈশাখী ভাতা নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। যদিও সরকারি স্কুল শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়া নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়না। শিক্ষকদের ক্ষোভ থাকেনা। এমপিও শিক্ষকদের মতো বেতনভাতা ছাড়ের খবরের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের সংবাদপত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। তাই এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় কোনো সংবাদও প্রকাশ হয়না। 

একটি এমপিওভুক্ত কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আমার প্রশ্ন হলো: একই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি অধিদপ্তরে পারলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কেন ২৫ মার্চেই চেকগুলো ব্যাংকে পাঠাতে পারলো না? কেন এমপিওসংশ্লিষ্ট কাগজগুলো প্রিন্ট ও সীল মারার কাজটা লম্বা সাধারণ ছুটি শুরুর আগেই করিয়ে নিলেন না? গত সপ্তাহে দৈনিক শিক্ষার প্রতিবেদনে দেখলাম ৫ এপ্রিল সিদ্ধান্ত হবে কবে ও কীভাবে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড় করা হবে। এমপিওর কাগজ প্রিন্ট কপি না-কি অনলাইনে যাবে তা নিয়ে একমাত্র দৈনিক শিক্ষায়ই গত ৯/১০ বছর ধরে রিপোর্ট দেখছি। এই পত্রিকার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন অনলাইনে দেয়ানোর জন। বিশেষ করে যখন মো: নজরুল ইসলাম খান শিক্ষাসচিব পদে ছিলেন। কেন অনলাাইনে দেয়া যায় না, কারা আটকে রেখেছে সে বিষয়েও প্রতিবেদন দেখেছি দৈনিক শিক্ষায়ই।   

যতদূর জানি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: গোলাম ফারুক একজন সরকারি কলেজ শিক্ষক এবং সরকারের কাছ থেকে একজন মানুষ যত ধরণের সুবিধা পেতে পারেন তার সবগুলোই তিনি নিয়েছেন। তাতে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি যেই থাকুক না কেন। সবচাইতে বেশি সুবিধা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের তালিকায় বর্তমান মহাপরিচালকের নাম সবার উপরে না থাকলেও দুই অথবা তিন নম্বরে তো থাকবেই। একথা হলফ করে বলা যায়। শুধু চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি কলেজেই নয় পড়াননি তিনি। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামাত জমানায় ১০ শতাংশ কোটায় অধ্যাপক হয়েছেন। নিয়ম না মেনে লিয়েন নিয়ে ৮ বছরেও বেশি সময় সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। এমন একজন শিক্ষক কিন্তু তার অধীনস্ত তিন লাখের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর কথা এতটুকুও ভাবলেন না? মহাপরিচালকের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজর সব শিক্ষক কিন্তু যথাক্রমে ১ ও ২ এপ্রিল বেতন ও বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন। সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকরা পেয়েছেন। 

আরেকটি দু:খজনক বিষয় দেখে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। গতকাল ৩ এপ্রিল একটা জাতীয় দৈনিকে একটা বিভ্রান্তিকর সংবাদ দেখে।  সমকালে প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর সংবাদটিতে বলা হয়েছে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর কারোরই বেতন-ভাতার চেক ছাড় হয়নি। আসলে এটি একটি নির্জলা মিথ্যা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি অধিদপ্তরের অধীনে ২৮ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় পৌণে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী (নতুন ২ হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠান বাদে) এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসা অধিদপ্তরের চেক ২৫ মার্চেই ব্যাংকে চলে গেছে। ৯/১০ এপ্রিলের মধ্যে তারা টাকা হাতে পাবেন। 

তিনটি আলাদা অধিদপ্তর হলেও সমকাল পত্রিকা লিখেছে সব মানে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীই ক্ষুব্ধ! আলাদা অধিদপ্তর হলেও শুধু  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বলে গোঁজামিল দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও একজন উপপরিচালকের মতামত নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। আসলে স্কুল ও কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তরের। 

নিবেদক  

মনজিল মোরশেদ

এমপিওভুক্ত কলেজর সহকারী অধ্যাপক

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]       

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081510543823242