মাসিক ১০০ টাকায় 'লেখাপড়ার' মহাপরিকল্পনা, প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগের - দৈনিকশিক্ষা

মাসিক ১০০ টাকায় 'লেখাপড়ার' মহাপরিকল্পনা, প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও ইউজিসি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সার্ভিস কীভাবে শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যায়- তা নিয়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করে ফলপ্রসূ একটা সমাধানও পেয়েছে। আর তা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১০০ টাকায় মাসব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায় ইউজিসির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৪২টি সরকারি ও ৬৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় 'বিডিরেন' প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে। মাসব্যাপী ১০০ টাকার এই সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে শিক্ষার্থীদের টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় নূ্যনতম ডাটা ব্যালান্স থাকতে হবে। তবে 'বিডিরেন' প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জুম অ্যাপে যুক্ত হওয়ার পর আর কোনো ডাটা চার্জ করা হবে না। ক্লাসের পাশাপাশি যদি কোনো শিক্ষার্থী ওই ডিভাইস থেকে অন্য কোনো সাইট বা অ্যাপ ব্রাউজিং করে অথবা মোবাইল ইন্টারনেট হটস্পট চালু করে অন্য কোনো ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাহলে এই ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যে ডাটা খরচ হবে সে পরিমাণ চার্জ করা হবে।

উল্লেখ্য, এক ঘণ্টার একটি ভিডিও ক্লাসের জন্য প্রায় ৭০০-১০০০ মেগাবাইট ডাটা প্রয়োজন হয়, যার মূল্য নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ৭০-৮০ টাকা। সে হিসাবে একজন শিক্ষার্থীকে যদি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২টি ক্লাসে সংযুক্ত হতে হয়, তবে তার খরচ হচ্ছে ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকা। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এটি খুবই ব্যয়বহুল এবং অসাধ্য।

করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যখন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে এবং বলতে গেলে লেখাপড়া থেকেও অনেকটা বিচ্ছিন্ন; ঠিক তখন সরকারের এই ঘোষণা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগের আওতায় আসবে নিশ্চয়ই। এমনকি প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সব স্তরে সবাই এই সুযোগটি পাবে বলে সংশ্নিষ্ট মহল আশা করছে। টেলিটকের ফ্রি ইন্টারনেটে 'পাবে সবাই, শিখবে সবাই' স্লোগানটি গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন চমৎকার সুযোগ অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দেওয়ার জন্য ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ব্যবসাসফল অন্যান্য কোম্পানিও (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি-এয়ারটেল) সরকারের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে বৈকি।

করোনার শুরু থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা করতে পারেনি। পরবর্তীকালে ইউজিসি ও বিডিরেনের সহায়তায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক (প্রায় ৬০-৭০%) থাকলেও দিনে দিনে তা কমে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ গ্রামে-গঞ্জে থাকা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ডিভাইসের অভাব, নেটওয়ার্ক সমস্যা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি। পরে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের কার কী সমস্যা, ক্লাসে কেন উপস্থিতি কম- এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে ইউজিসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশে চলমান সব টেলিফোন কোম্পানির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। এক পর্যায়ে অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে মোবাইলে ডাটা দেওয়ার জন্য টেলিফোন কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, টেলিটক কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি।

দেশে বর্তমানে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি-এয়ারটেল এবং টেলিটক এই চার-পাঁচটি অপারেটর টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গ্রামীণফোন এবং রবি-এয়ারটেল ১৯৯৭, বাংলালিংক ২০০৫-০৬ এবং টেলিটক ২০০৪ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তন্মধ্যে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক ৪জি এবং রবি-এয়ারটেল ৪.৫জি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তারাও এগিয়ে এলে শহরাঞ্চল ছাড়া গ্রামগঞ্জ, পাহাড় এলাকা, বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও অনলাইন ক্লাসে সম্পৃক্ত হতে পারবে।

সেজন্য বসে থাকা চলবে না। বর্তমানে দেশে চলমান ৪৬টি পাবলিক ও ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১০৪টি কলেজ ও ইনস্টিটিউট, অধিভুক্ত সাতটি কলেজ আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি (২৬৫টি) ও বেসরকারি (৫৯২টি) কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে সর্বসাকল্যে ২২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব বিচ্ছিন্ন স্থানে টেলিটকের টাওয়ার স্থাপন করার জন্য সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখনই মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, কলরেট কমানো, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি, ৪জি, ৫জিসহ সবধরনের আধুনিক সেবায় টেলিটক যেন সবার উপরে থাকতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি সমগ্র দেশকে টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে যথাশিগগির।

 

লেখক : ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, অধ্যাপক ও পরিচালক, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037829875946045