সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় 'মাসুদ রানা' সিরিজের স্বত্ব ভাগ হয়ে গেল। কাজী আনোয়ার হোসেনের পাশাপাশি এই সিরিজের লেখক হিসেবে স্বত্ব পেলেন আরেক লেখক শেখ আবদুল হাকিম। এক বছরেরও বেশি সময় আইনি লড়াইয়ের পর গতকাল রোববার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমকে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব দিয়ে রায় দিয়েছে। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
কপিরাইট অফিস সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রথম শেখ আবদুল হাকিম মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের সিংহভাগ বইয়ের লেখক দাবি করে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দেন। তবে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তার শুনানি না হওয়ায় ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আবদুল হাকিম 'মাসুদ রানা' সিরিজের ২৬০টি এবং 'কুয়াশা' সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব দাবি করে আবারও আবেদন করেন। এতে তিনি সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।
শেখ আবদুল হাকিমের অভিযোগের বিষয়ে অভিযোগকারী ও প্রতিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১১ ও ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৪ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দাখিল করা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিপক্ষ লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। প্রতিপক্ষের লিখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী আবারও সপক্ষে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করেন। এভাবে কয়েক দফায় উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক চলে। এ ছাড়া রায় দেওয়ার আগে দেশের বিখ্যাত ও প্রথিতযশা কয়েকজন লেখক, প্রকাশক এবং সেবা প্রকাশনীর সাবেক ব্যবস্থাপকের লিখিত মতামত চাওয়া হয়। তারা হচ্ছেন লেখক বুলবুল চৌধুরী, শওকত হোসেন, প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান এবং সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ইসরাইল হোসেন খান। তাদের লিখিত মতামতের ওপর ভিত্তি করেই রায় দেওয়া হয়েছে।
রায়ের ব্যাপারে কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, 'শেখ আবদুল হাকিম তার আবেদনে মাসুদ রানার ২৬০টি, কুয়াশার ৫০টির স্বত্ব দাবি করেন। এর মধ্যে মাসুদ রানা সিরিজের একটি এবং কুয়াশা সিরিজের মধ্যে ছয়টিতে লেখক হিসেবে তার নামে কপিরাইট করা আছে। বাকিগুলোর কপিরাইট করা ছিল না। শেখ আবদুল হাকিম প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, সিংহভাগ মাসুদ রানা এবং কুয়াশা সিরিজের লেখক তিনি। এ ছাড়া প্রথিতযশা আরও লেখকদের যে মতামত নেওয়া হয়েছে সেখানেও শেখ আবদুল হাকিমই সিংহভাগ বইয়ের মূল লেখক হিসেবে বিবেচিত হন। পুরো শুনানি থেকে দেখা যায়, মাসুদ রানা সিরিজের ১ থেকে ১৮ নম্বর সিরিজ পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেন লিখেছেন। এরপর থেকে শেখ আবদুল হাকিম লিখতে শুরু করেন। তিনি মূল পাণ্ডুলিপি লিখতেন এবং কাজী আনোয়ার হোসেন সেটি সম্পাদনা করতেন। ফলে আইন অনুযায়ী মূল পাণ্ডুলিপি লেখকই মূল লেখক। কাজী আনোয়ার হোসেন এ ক্ষেত্রে বড়জোর সম্পাদক। লেখার জন্য শেখ আবদুল হাকিম খুব সামান্য সম্মানী পেয়েছেন বলেও শুনানিতে প্রতীয়মান হয়। তবে এখন তিনি সিংহভাগের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কোনগুলোর লেখক তার জন্য আরও শুনানি শেষে প্রতিটি বইয়ের জন্য তার কপিরাইট নিবন্ধন হবে। এরপর প্রতিটি বইয়ের লেখক হিসেবে তার নাম যাওয়ার পাশাপাশি কপিরাইটও তার হবে। রেজিস্ট্রার আরও জানান, 'কাজী আনোয়ার হোসেন চাইলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এখানেও হেরে গেলে তিনি হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন।' মাসুদ রানা সিরিজের আরও ৫০টি বইয়ের লেখক দাবি করে আর একজন লেখকের ওপর শুনানি শিগগির শুরু হবে বলেও জানান জাফর রাজা চৌধুরী।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে শেখ আবদুল হাকিম লেখেন, 'রায় পেলাম। খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি সারাজীবন ধরে সেবা প্রকাশনীতে যা কিছু লিখেছি, এটা তার স্বীকৃতি। এতে আমার একটা যুদ্ধ সাফল্যের সঙ্গে শেষ হলো; এবার দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হবে :আমাকে আমার ন্যায্য পাওনা পেতে হবে। আমাকে বিনয়ী হতে দিন।'