মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন পান বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক মাসুদা বেগম ও শারমিন আক্তার। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে বদলি করে মাসুদার স্বামীর কর্মস্থলের খুব কাছে বরিশাল বিএম কলেজে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যাননি মাসুদা বেগম। কয়েকদিনের মধ্যে ওই বদলি আদেশ বাতিল করিয়ে কুমিল্লা সরকারি কলেজে বদলির আদেশ হয়। কিন্তু এই কলেজেও মাসের পর মাস না গিয়ে ঢাকার শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা বোর্ডে ঘোরাঘুরি করেন মাসুদা। এ খবর পৌঁছে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে। দুদক জানতে চায় মাসুদা কলেজে না গিয়েও কেন নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন? এতে সরকারের মোট কত লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে? মাসুদাকে নিয়মিত বেতন দেয়ার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কারা দায়ী? ইত্যাদি বিষয় অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিয়ে দুদককে জানাতে বলা হলেও আজও সেই চিঠির জবাব দেয়নি শিক্ষা অধিদপ্তর। উল্টো মাসুদাকে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে নায়েমে আনা হয়েছে গত মাসে। আর ঢাকা কলেজের শারমিনা বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকছেন। দুদক জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুই মাস আগে। কিন্তু ওই চিঠিরও জবাব দেয়নি অধিদপ্তর। দুদক ও অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এপ্রিল মাসে দুদকের চিঠিটি অধিদপ্তরের কলেজ শাখার পরিচালক মো. শাহেদুল খবিরের কাছে রয়েছে। মাসুদা ছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের অন্য কারো বিরুদ্ধে এমন চিঠি এলে এ সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে শাস্তিও নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু মাসুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ায় চিঠিটির গতি কমেছে।
এর আগে মাসুদার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলে বাড়ৈ সিন্ডিকেটের একজন সদস্য দিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার অভিযোগ মাসুদার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে মাসুদার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি কলেজে যান না বলে তার একাধিক সহকর্মী দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকের নির্দেশে তদন্ত শুরু করতেই একমাস লেগেছে। আজও প্রতিবেদন জমা হয়নি বলে জানা গেছে। নুরুল ইসলাম নাহিদের মন্ত্রীত্বকালে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই শারমিন বছরে পর বছর কলেজে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন। তদন্ত করে শাস্তি দিতে বলেছে দুদক।