মাসে ৬৫ হাজার টাকা সম্মানী নেন সভাপতি - দৈনিকশিক্ষা

শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজমাসে ৬৫ হাজার টাকা সম্মানী নেন সভাপতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির (জিবি) বা পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকসহ নানাভাবে সহায়তা করা। কিন্তু অনেকটা উল্টো পথে চলছে রাজধানীর নামকরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানের জিবি সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদ খান গত অর্থবছরে মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে সম্মানী নিয়েছেন।

এ জন্য একাধিক কমিটি ও নানা খাতের সম্মানী দেখিয়েছেন তিনি। এমনকি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৪ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল ফোনও কিনেছেন তিনি। বুধবার (৬ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে বিভিন্ন খাতের সম্মানী দেখিয়ে মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন সভাপতি। গত অর্থবছরে নেওয়া সম্মানীর মধ্যে আছে—নিয়োগ কমিটির সভা বাবদ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৩৫০ টাকা, জিবির সভা বাবদ দুই লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় সম্মানী বাবদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোনের বিল বাবদ ৪৮ হাজার টাকা,  ক্লাস নেওয়া বাবদ দুই লাখ টাকা এবং পদোন্নতি কমিটির সভা করে নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা।

জানা যায়, গভর্নিং বডির সভাপতিকে ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে পড়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। বেশির ভাগ শিক্ষকই সভাপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নামে জমি কেনায় অনিয়ম, নিয়ম ভেঙে সম্মানী নেওয়া, কেনাকাটায় অনিয়ম, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষকরা। সভাপতির অনিয়মের বিষয়ে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগও দিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি কলেজের গভর্নিং বডির অনিয়ম তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কলেজটিতে ৭০ জন নিয়মিত শিক্ষক আছেন। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ৪০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি। ওই নিয়োগে একই দিনে একাধিক বিষয়ের পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা সম্মানী নেন তিনি। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ফল প্রকাশ করার নিয়ম থাকলেও সভাপতি ১০ দিন পরে ফল প্রকাশ করেন। এতে লিখিত পরীক্ষার ফলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

জানা যায়, কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নামে চানখাঁরপুল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জে গ্রামের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকায় ৪৩১ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অভিমতকে মূল্য দেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি-বিধানে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সুযোগ না থাকলেও সেই নামেই জমি কেনা হয়েছে। একাধিক বৈঠকে শিক্ষকরা কেরানীগঞ্জে জমি কেনার বিপক্ষে অভিমত তুলে ধরলে তাঁদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, জমি কেনায় বড় অনিয়ম হয়েছে। চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করার নিয়ম থাকলেও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে জমির মালিককে। এমনকি যেখানে দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা করে শতাংশ কেনা হয়েছে সেখানে জমির দাম আরো কম।

কলেজের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কলেজ তহবিলে গচ্ছিত থাকা ৭০ কোটি টাকা ব্যয় করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতিসহ কয়েকজন সদস্য। এমনকি ব্যাংকে এফডিআর করা টাকা একটি লিজিং কম্পানিতে রাখারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন বর্তমান সভাপতি। তবে তাতে সবাই সম্মতি দেননি। সম্প্রতি কলেজে সাবস্টেশন স্থাপনসংক্রান্ত দরপত্রে নামি কম্পানি অংশ নিলেও তাদের বাদ দিয়ে অখ্যাত এক কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়। এতে বড় অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

জানা যায়, কলেজে নৃবিজ্ঞানে মাত্র ৭২ জন ছাত্র-ছাত্রী। পরিবেশবিজ্ঞানে শিক্ষকের দরকার নেই। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত দুই শিক্ষকের কোনো বিভাগই (ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি) নেই। ওই সব শিক্ষককে বসিয়ে রেখে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এর পরও সর্বশেষ সয়েল সায়েন্স (মৃত্তিকাবিজ্ঞান) বিভাগে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই নামে কলেজে কোনো বিভাগ নেই।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি গভর্নিং বডির সদস্যসচিব হলেও সভাপতির নির্দেশক্রমেই আমাকে সব কাজ করতে হয়। তাঁর কোনো কথা না শুনলে তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। সাধারণ শিক্ষকদের কথার তেমন কোনো মূল্যই দেন না। আমাদের এখনই কলেজের এক্সটেনশন দরকার। কিন্তু কেরানীগঞ্জে বিচ্ছিন্ন এলাকায় জমি কেনা হয়েছে। সভাপতি যেভাবে কমিটি গঠন করতে বলেন সেভাবে আমরা করতে বাধ্য হই। ফলে দেখা যায়, একই কাজের জন্য আমাদের একাধিক কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির মিটিংসহ নানা কাজে অনেক টাকাও ব্যয় হচ্ছে।’

এসব বিষয়ে জিবি সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদ খান বলেন, ‘অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষককে অনিয়ম করতে না দেওয়ায় তাঁরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। মোবাইল ফোন আগের সভাপতি নিয়েছেন, তাই প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী আমিও নিয়েছি। এ ছাড়া সম্মানী নেওয়ার বিষয়টিও আগে থেকেই চলে এসেছে। আমি তো এটা বন্ধ করতে পারি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা আরো বাড়ানো দরকার। আর যথাযথ নিয়ম মেনেই জমি কেনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় আমি একচুলও অনিয়ম করিনি।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070350170135498