শান্তি নিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে পাঠালেন, 'আপনি আজকাল কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এ জন্য কাল বিকেলে আমার বাড়িতে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।'
নেপাল বাবু খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তায় চিন্তায় রাতে তার আর ঘুম হয় না। সকাল হতেই তিনি ছুটলেন কবি গুরু কাছে। বসার ঘরে তটস্থ হয়ে বসে ছিলেন নেপাল। না জানি কি ভুলের জন্য আজ কি দণ্ড পেতে হয়!
মোটা একটা লাঠি হাতে ঘরে প্রবেশ করলেন কবিগুরু। নেপাল বাবু ভাবলেন, দণ্ড হিসেবে এবার লাঠির বাড়িই খেতে হবে!
কবি লাঠিটি নেপাল বাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, 'এই নিন আপনার দণ্ড।সে দিন যে আমার বাড়িতে রেখে গেছেন, তা একেবারে ভুলে বসে আছেন!
দণ্ড অর্থাৎ লাঠি নামক বস্তুর সাথে আমরা সকলে পরিচিত। স্থান-কাল-পাত্রভেদে লাঠির ব্যবহার বহুবিধ। আকার-আকৃতিতে লাঠি আবার বিভিন্ন রকম। মোটা লাঠি, মাঝারি লাঠি, ছোট লাঠি। লাঠি ছোট হলে তাকে কাঠি বলা হয়। কখনো কানের মাঝে কুটুস-কাটুস করলে আমরা ছোট লাঠি অর্থাৎ কাঠি ব্যবহার করি। প্রবাদেও কাঠির ব্যবহার আছে। যেমন, কাউকে বিপদে ফেলা, উসকানি দেয়া কিংবা খোঁচা দেয়াকে 'কাঠি করা' বলে।লাঠি বড় হলে কখনো কখনো তাকে খুঁটি বলে। ঘরের চাল দাঁড় করাতে আমরা খুঁটি লাগাই। কাঠির মত খুঁটিও প্রবাদে জায়গা করে নিয়েছে। সংসারের প্রধানকে আমরা খুঁটি বলি।
সঙ্গীতশিল্পী নকুল কুমার তার গানে লাঠির একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। অনেকেই হয়ত গানটি শুনে থাকবেন। অন্ধ ব্যক্তি পথ চলতে লাঠি ব্যবহার করে। তাকে আমরা ছড়ি বলি। গ্রাম বাংলার মারামারির কাজে লাঠি এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। সহজলভ্য এই বস্তু বিরোধী পক্ষের মাথা ফাটাতে বিশেষ ফলপ্রদ। স্কুলের মাস্টার মশায় অবাধ্য ছাত্রকে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে বেত ব্যবহার করেন। বেত এক প্রকার লাঠি, যদিও সরকার এই লাঠির ব্যবহার বর্তমানে নিষিদ্ধ করেছে। চোর-ডাকাত-উচ্ছৃঙ্খল জনতা দমনে লাঠির বাড়ি বাধ্যতামূলক। এ লাঠির প্রয়োগ ঘটায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে খারাপ লাগে সে প্রয়োগ কখনো যদি স্পর্শকাতর ঘটনায় যু্ক্ত হয়ে পড়ে। যেমনটা ঘটেছে গত ২২ অক্টোবর রাতে। সমাপ্ত হওয়া সেকায়েপ (সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যাকসেস অ্যান্ড এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের শিক্ষকরা চাকরি স্থায়ী করার দাবি নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন।গভীর রাতে ক্লান্ত-শ্রান্ত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে অনেক শিক্ষক আহত হন।বিষয়টা কিছু সংখ্যক গণমাধ্যমের নজর কেড়েছে। সভ্য দেশে শিক্ষকদের সাথে এমন আচরণ কখনো কাম্য নয়। হোক তারা অস্থায়ী কিংবা প্রকল্পের শিক্ষক।শিক্ষকরা সর্বদা মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র।আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য সে দিন শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি,' আপনিও কোনো না কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে পড়াশোনা শিখে এই পেশায় এসেছেন। সুতরাং শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্ব আপনারও।'
পরিশেষে বলব, লাঠির প্রয়োগ ঘটুক তবে সেটা শুভ কাজের উদ্দ্যেশ্যে।
লেখক: শিক্ষানুরাগী, কেশবপুর, যশোর।
[ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন ]