গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা বরিশাল সিটি করপোরেশনে গেলো নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্ত্তী। সে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে আসছিলেন তিনি। তবে সদ্য ঘোষিত রাজাকার তালিকায় এখন তার নাম ৬৫ নম্বরে।
মনীষা চক্রবর্ত্তীর ঠাকুরদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীর স্ত্রী উষা রানী চক্রবর্ত্তীও সদ্য ঘোষিত রাজাকার তালিকায় এখন ৪৫ নম্বরে।
নিজের মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকায় দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ কথা জানিয়েছেন বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী।
নিচে ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো-
‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে।
আমার বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্ত্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। ক্রমিক নম্বর ১১২, পৃষ্ঠা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নম্বর রাজাকার।
আমার ঠাকুরদা অ্যাডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে।’
এদিকে প্রকাশিত ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে।
তালিকায় নাম থাকা অন্যরা হলেন, অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।
রাজাকারের প্রকাশিত তালিকার ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) থাকা এই পাঁচজনের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল।
অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আরিফ টিপুর বড় অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।
এছাড়া অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও অ্যাডভোকেট মহসিন আলী তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তাদের নামও যদি তালিকায় থাকে, সেটিও হবে চরম লজ্জাজনক। কেন তাদের নাম এ তালিকায় উঠে এলো, কোন প্রসঙ্গে এলো তা বিস্তারিত উল্লেখ নাই।