করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরলোকগমন করেছেন। করোনা আতঙ্কে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষকের সৎকারে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো সংগঠন কিংবা কোনো ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি।
এ অবস্থায় মানবতার দৃষ্টান্ত দেখালেন স্থানীয় এক মুসলিম যুবক। তার নেতৃত্বে গ্রামের কয়েকজন মুসলিম যুবক ওই শিক্ষকের সৎকারে এগিয়ে আসেন। বিষয়টি দেখে ওসব যুবকের প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।
পরলোকগমন করা ওই শিক্ষকের নাম হরিলাল দেবনাথ (৫৫)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং একই উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১০ জুন) দিবাগত রাতে পরলোকগমন করেন শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ। যথারীতি বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকালে তার সৎকারের কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো হিন্দু মারা গেলে তার সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় রীতিতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা থাকলেও হরিলাল দেবনাথের সৎকারে এগিয়ে আসেনি কেউ। তার সৎকারে এগিয়ে আসেনি স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় বা সনাতন ধর্মাবলম্বী কোনো সংগঠনও। অবশেষে ওই দিন বিকেলে মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন পালোয়ান নামের এক মুসলিম যুবকের নেতৃত্বে ওই গ্রামের কয়েকজন মুসলিম যুবকের উদ্যোগে হরিলাল দেবনাথের সৎকার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকের পরিবারের এক সদস্য জানান, করোনা সন্দেহে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাধার মুখে পড়ে মৃতের পরিবার। কিন্তু এ ব্যাপারে হিন্দু সম্প্রদায় বা সনাতন ধর্মাবলম্বী কোনো সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। সব বাধা উপেক্ষা করে কবির হোসেন পালোয়ান নামের মৈশাইর গ্রামের স্থানীয় এক মুসলিম যুবকের নেতৃত্বে ওই গ্রামেরই আরও কিছু মুসলিম যুবক তার সৎকারে এগিয়ে আসেন। তিনি একজন মানুষ গড়ার কারিগর ও জীবদ্দশায় হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন; অথচ তার সৎকারে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ এগিয়ে আসেনি। যা আমাদের জীবনে অনেক বড় একটা শিক্ষা।
স্থানীয়রা বলছেন, ধর্মীয় রীতি মেনে শিক্ষক হরিলাল দেবনাথের সৎকার করতে হিন্দু সম্প্রদায় তথা তার সমাজবাসী এগিয়ে আসার কথা। কিন্তু তিনি করোনায় মারা যাননি। তবে কেন এই মানুষ গড়ার কারিগরের সৎকার সম্পন্ন করে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়নি এলাকাবাসী? অবশেষে মুসলিম যুবকরা তার সৎকার করেছেন। এই শিক্ষকের সৎকার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওই যুবকরা।
শনিবার (১৩ জুন) সকালে প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথের সৎকারে নেতৃত্ব দেয়া ওই মুসলিম যুবক কবির হোসেন পালোয়ানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে স্থানীয় কিছু সংখ্যক মুসলিম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার সৎকার করেছি। এটি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।