যেখানেই মূল্যায়ন প্রচলিত আছে, সেখানেই মাপকাঠি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরাও মূল্যায়নের আশাতেই কাজ করেছেন। সুতরাং পুরস্কার ও মূল্যায়নের বিষয়টি এলেই সেখানে মাপকাঠি ও প্রতিযোগিতা থাকবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পেয়ে জিততে চায়, এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। তবে প্রশ্ন উঠছে, তারা শেখার চেয়ে দৌড়াচ্ছে জেতার পেছনে।
আমি দোষ দেখি তাঁদের, আমরা যাঁরা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। একজন শিক্ষার্থী যথেষ্ট গভীরতা অর্জন না করা সত্ত্বেও মূল্যায়ন পদ্ধতির দুর্বলতার কারণে জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এই জিপিএ-৫ তাদের সাময়িক সাফল্য এনে দিলেও পরে তা কাজে লাগছে না, কারণ তারা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। কেবল মূল্যায়ন নয়, আমাদের প্রশ্ন প্রণয়নেও দুর্বলতা রয়েছে।[insie-ad]
আমাদের সময় বেশি নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রচুর পড়াশোনা করতে হতো। এখন যেমন জিপিএ-৫-এর পেছনে ইঁদুর দৌড়, তেমনটা আমাদের সময়ও ছিল, তবে এখন গভীরতা কমে গেছে। এর দায়টাও আমাদেরই নিতে হবে, কারণ আমরা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটাকে এমন জায়গায় নিয়ে এসেছি, যেখানে ন্যূনতম পড়াশোনা করেই পাস করা যায়। হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থী প্রকৃত জ্ঞানটুকু অর্জন করে এবং পরবর্তীকালে ভালো ফলাফল করে, কিন্তু বাকিরা থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।
জিপিএ-৫ পাওয়ার আশায় নোট, সাজেশন আর প্রাইভেট পড়ার পেছনে ছোটাছুটি করছে। আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের কথা বিবেচনা করতে হবে, বিশ্বের কথা ভেবে অন্যদের সাপেক্ষে নিজেদের অগ্রগতির কথা ভাবতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করতে হবে। কেবল বইয়ের পড়াশোনা নয়, এর বাইরে বিশ্বকে জানতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।
এই মেরুদণ্ড সুস্থ রাখতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে কলেজে ভর্তি নির্বাচন একটি ভালো প্রক্রিয়া। এতে পজিটিভ কো-রিলেশন থাকা জরুরি। পড়াশোনা করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। সেটিই আমাদের মেধাসম্পদ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: ইত্তেফাক