মৃত্যুকূপে বসবাস ৭০০ শিক্ষার্থীর - Dainikshiksha

মৃত্যুকূপে বসবাস ৭০০ শিক্ষার্থীর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, বেরিয়ে এসেছে পুরনো জং ধরা রড। ছয়টি বাঁশ আর কাঠের খুঁটি দিয়ে ছাদ ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কক্ষের মেঝেতে বিছানা পেতে থাকছে ১৬ জন শিক্ষার্থী। এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। বাস্তব এই দৃশ্য সরকারি তিতুমীর কলেজের আক্কাসুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের। শনিবার (১৮ মে) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া। 

গত সোমবার  এ দুই প্রতিবেদক ওই ছাত্রাবাসে যান। সেখানে বসবাস করছে ৭০০ শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাসটির বেশির ভাগ কক্ষই এমন জরাজীর্ণ। ছাদ ধসে পড়া ঠেকাতে ডাইনিং রুমসহ বেশির ভাগ কক্ষেই ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। এ যেন মৃত্যুকূপে বসবাস।

কেন এই মৃত্যুকূপে থাকছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমার বাড়ি রংপুর। ঢাকায় কেউ নেই। মেস অথবা বাসা ভাড়া করে যে থাকব, বাড়ি থেকে সে পরিমাণ টাকা পাঠানোরও সামর্থ্য নেই। কোনোমতে টিউশনি করে খাবার খরচ চালাই। এক রকম বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে। তাও বড় ভাইদের ধরে, নানাভাবে ম্যানেজ করে এই ছাত্রাবাসে উঠতে হয়েছে।’

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে আঁখি ছাত্রাবাসকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। আর সংস্কারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। তবে কলেজ ছাত্রলীগের আপত্তির মুখে এখনো সংস্কারকাজে হাত দেওয়া যায়নি। কোনো বড় ছুটি ছাড়া তারা এই ছাত্রাবাসের সংস্কারকাজ শুরু করতে দিতে নারাজ।

সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৬ হাজার। তাদের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি ছাত্রাবাস। ছেলেদের জন্য আককাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাস। আর মেয়েদের জন্য সুফিয়া কামাল ও সিরাজ ছাত্রীনিবাস। সিরাজ ছাত্রীনিবাস কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বনানীতে অবস্থিত। তিনটি ছাত্রাবাসে প্রায় ২০০ করে মোট আসন ৫৮৪। এর মধ্যে ছাত্রাবাসে থাকছে প্রায় ৭০০ জন। দুটি ছাত্রীনিবাসে থাকছে ৫০০-৫৫০ জন। কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী থাকছে তিনটি হলে। আসন বরাদ্দ পাওয়া রীতিমতো সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। এ ছাড়া আসন বণ্টনের অলিখিত দায়িত্ব পালন করে আসছে ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির তদবির ছাড়া ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসে আসন পাওয়া অসম্ভব।

সরেজমিনে জানা যায়, সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষেই বসবাস ৬০ জন ছাত্রীর। এ ছাড়া চারজনের একটি কক্ষে থাকে আট থেকে ১২ জন করে। শিক্ষার্থীদের টাকায় ডাইনিং সুবিধা চালু থাকলেও খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এ ছাড়া ছারপোকা, মশা, ব্যবহারের অনুপযোগী শৌচাগার—এসব সমস্যা তো রয়েছেই। ছাত্রাবাসের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাঁদের ভয় নাম প্রকাশ করলে হয়তো ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেওয়া হবে।

আঁখি ছাত্রাবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে প্রতিটি রুম একেকটি গণরুম। প্রায় সময়ই ভবনের ইট-পলেস্তারা খসে পড়ে। কবে যে ভবনটিই ধসে পড়ে তার নিশ্চয়তা নেই। একেকটি রুমে ১৬ জন করে বসবাস করছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় আমাদের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার নেই।’

সিরাজ ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একেক রুমে এতসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকে যে কোনো রকম পড়ালেখার পরিবেশ নেই। আর আমরা নিজেরা বাজার করে নিজেরা রান্না করে খাই। কলেজ কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা নেই।’

সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডাইনিং থাকলেও আমাদের নিজেদের মতো করেই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। আর হলের যে পরিবেশ তাতে এটাকে কলেজের কোনো অংশ বলা যায় না। এর পরও প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি, কখন বের করে দেওয়া হয়। কোনো উপায় না পেয়েই এখানে বসবাস করছি।’

ছাত্রাবাসের বেহাল অবস্থার চিত্র তুলে ধরে আঁখি ছাত্রাবাসের আরেক শিক্ষার্থী জানান, শৌচাগার পুরোপুরিই ব্যবহার অনুপযোগী। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। তার ওপর বড় ভাইদের আগে যেতে দিতে হয়। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের ছাত্রাবাসের সমস্যা বলে শেষ করা যাবে না।’

শিক্ষার্থীরা জানায়, বিভিন্ন সময় ছাত্রাবাসের সমস্যা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছে তারা। কর্তৃপক্ষের লোকজন নিজেরাও এসে দেখেছে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ হোসেন  বলেন, ‘আগামী ২০ মে থেকে ছাত্রাবাস সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।’

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044050216674805