মেরিন একাডেমি কলেজ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে টাকার খেলা - দৈনিকশিক্ষা

মেরিন একাডেমি কলেজ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে টাকার খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কথিত ভগ্নিপতি ও ভায়রা ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে সদ্য এমপিওভুক্ত হওয়া চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর সভাপতি আবুল কালাম আজাদের দিকে। টাকা না দেয়ায় অধ্যক্ষসহ দুইজন শিক্ষকের আবেদন অগ্রায়ণ করা হচ্ছে না। ঘুষ না দেয়ায় অবৈধভাবে বরখাস্ত করে তাকে এমপিও বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন।

অধ্যক্ষের অভিযোগ, এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ না দেয়ায় জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগ করিয়েছিলেন সভাপতি এবং জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের আপিল এন্ড আর্বিট্রেশন কমিটি থেকে অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিনকে পুনর্বহাল করতে বলা হলেও তা করেননি সভাপতি আবুল কালাম খান। তাই এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারেননি বৈধ অধ্যক্ষ। আর টাকা দিতে না পারায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া ৩জন প্রভাষকের একজনের আবেদন অগ্রায়ণ করা হয়নি। অথচ কয়েক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বাকি ২ জন শিক্ষকের এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করা হয়েছে। যদিও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এনটিআরসিএর সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিধি সম্মতভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হতো।

এদিকে প্রতিষ্ঠান আইসিটি প্রভাষক নুরুজ্জামান অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, টাকা দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির চারজন শিক্ষক তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা শুরু করেন। একসময় ইমেইলের মাধ্যমে একটি পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করেন নুরুজ্জামানকে। কিন্তু সে পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না বলে একাধিক দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। অথচ কয়েকলাখ টাকার বিনিময়ে তার সাথে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া দুই জন শিক্ষকের এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করা হয়েছে।

তবে, আদালতে মামলা চলমান থাকায় অধ্যক্ষের পদত্যাগ নিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমের সাথে কথা বলেননি সভাপতি আবুল কালাম খান। আর এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ নেয়ার অভিযোগ আস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও প্রভাষক নুরুজ্জামানের এমপিও আবেদন নিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে দুই রকম কথা বলেছেন সভাপতি আবুল কালাম খান। একবার তিনি বলেন, 'নুরুজ্জামান এমপিওভুক্তির জন্য যোগাযোগই করেনি তার আবেদন কিভাবে পাঠাবো'। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি আবার বলেন, 'নুরুজ্জামান পদত্যাগ করেছেন, তার আবেদন কিভাবে পাঠাবো'।

অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ পান প্রতিষ্ঠানটিতে। এমপিওর আবেদন করেছিলেন নিজেই। কিন্তু এরপর প্রতিষ্ঠান ১৪ জন শিক্ষক এবং ৩ জন কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করতে ৩৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন সভাপতি আবুল কালাম খান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভাপতির ভগ্নিপতি এবং ভায়রা ভাই উচ্চপদে চাকরি করেন তাই এমপিওভুক্তির কাজ সহজ হবে বলে এ টাকা চাওয়া হয়। কয়েকজন শিক্ষক সহজে এমপিওভুক্ত হওয়ার আশায় টাকা দিতে চায়। কিন্তু আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। পরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি বহিরাগত কয়েকজনকে দিয়ে অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করা হয়। পরে এ নিয়ে অভিযোগ দিলে তা তদন্ত হয় এবং তদন্তে জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়।  পরে আপিল ও আর্বিট্রেশন কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপিত হলে অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু সে নির্দেশ না মেনে সভাপতি রিট মামলা করেন। ফলে আমি আবেদন করতে পারিনি।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর। কিন্তু তারপরও তিনি রিট মামলা দায়ের করে সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। সে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত এপ্রিল মাসে শেষ হয়ে গেছে। সে প্রেক্ষিতে এখন প্রতিষ্ঠানটিতে কোন সভাপতি নেই। তবুও শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সভাপতি আবুল কালাম খান। প্রতিজন শিক্ষকের কাছে ১ লাখ টাকা করে দাবি করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, আমার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষক। তার এমপিওভুক্তির জন্যও ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। টাকা দিতে না পারায় আমাকে এবং প্রভাষক নুরুজ্জামানকে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে দেয়া হয়নি

প্রভাষক নুরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য টাকা দিতে রাজি হন তাদের এমপিও আবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন আমার কাছে টাকা চাওয়া হয় আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে কয়েকজন শিক্ষকরা আমাকে টাকা দিতে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমি একটি পদত্যাগপত্র ইমেইলে পাঠাতে বাধ্য হই। পরে পদত্যাগপত্র ইমেইলে পাঠানো যে গ্রহণযোগ্য হবে না তা জানিয়ে দপ্তরে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু আমাকে এমপিও আবেদন করতে দেয়া হয়নি।

তবে, দৈনিক শিক্ষা ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি আবুল কালাম খান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমপিওভুক্তির জন্য কোন টাকা লেনদেন করা হয়নি। যারা অভিযোগ করেছেন তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করেছেন।

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে মামলা আদালতে চলমান রয়েছে তাই এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।

প্রভাষক নুরুজ্জামানের এমপিওর আবেদন নিয়ে দুই রকম কথা বলেছেন সভাপতি আবুল কালাম খান প্রথমে তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, 'প্রভাষক নুরুজ্জামান এমপিওভুক্তির আবেদন করতে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। যারা যোগাযোগ করেছেন তাদের সবার আবেদন করা হয়েছে। কোন শিক্ষকের আবেদন বাদ দেয়া হয়নি।' এর কিছুক্ষণ পরেই।তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'প্রভাষক নুরুজ্জামান ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তার এমপিও আবেদন আমি কিভাবে পাঠাবো? পদত্যাগ করায় নুরুজ্জামানের এমপিও আবেদন পাঠানো হয়নি।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003619909286499