নিরাপত্তার অভাবে মেয়েদের লেখাপড়ায় বাড়ছে ঝরে পড়ার হার। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করছে, তাদের সঙ্গে পিইসি পরীক্ষা দেয়া বহু মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে এই শিক্ষার্থীরা যখন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তখন সবমিলিয়ে ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। এ বছর এসএসসির সময় ১০ লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থীর কোনো হদিস মেলেনি। অর্থাৎ তারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এই ৫ বছরে ঝরে পড়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঝরে পড়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা নিরাপত্তার অভাব। আমরা প্রতিদিন দুটো বিষয় দেখি। একটি সড়ক দুর্ঘটনা অন্যটি নারী নির্যাতন। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক বাবা-মা এই ঝুঁকির কথা জানেন। এ কারণে বাবা-মা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। সরকার মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথ নিরাপদ হয়নি। ফলে অভিভাবকেরা মেয়েদের লেখাপড়ার চাইতে বিয়ে দিয়েই নিশ্চিত হতে চান। এ প্রবণতা বাড়ছে। অথচ সমাজে নারীর চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈষম্য বদলাতে পারলে, সব ধরনের সহিংসতা কমে আসত। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রায় প্রতিটি নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেই আপরাধ করেও অপরাধীরা নির্বিঘ্নে সমাজে চলাফেরা করে। ফলে ভিকটিমের পরিবার সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হয় এবং হত্যা, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং সমাজে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষণের সংস্কৃতি জিইয়ে রেখেছে। পাহাড়ে-সমতলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কল-কারখানায়, পথে-ঘাটে, পরিবহনে কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। এ নিরাপত্তাহীনতা জনগণের মধ্যে একধরনের ভয় ও দিশেহারা পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সমাজের সব স্তরে নারীর অবস্থান শক্তিশালী করা জরুরি। নারী-শিশুদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজে নারীকে ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মান দিতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টির অভাব নারী-শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। সেটাও তাদের প্রতি এক ধরনের নির্যাতন। রাষ্ট্রকে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে শুধু সরকার নয়, এ কাজে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।