ব্রিটিশ-পরবর্তী সময়ে এ দেশের রাজনীতি আজকের মতো সমতল ছিল না। বন্ধুর পথ পেরিয়ে করতে হয়েছে রাজনীতি। এ দেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবিটা প্রথম যে দুই নেতা তুলেছিলেন; মোজাফফর আহমদ তার একজন। ঠিক এ কারণেই ১৯৫৮ সালে ক্ষমতায় পা দিয়েই মোজাফফরের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন সামরিক শাসক। পুরস্কার ঘোষণা করেন মোজাফফর আহমদকে ধরিয়ে দিতে। সোমবার (২৬ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন মোহাম্মদ শরীফ।
ষাট, সত্তর ও আশির দশকে লাল পতাকাবাহী বামপন্থিদের যে বিশাল দাপুটে রাজনীতির গল্পটা এখন বলা হয়, তা কেবল মোজাফফরের মতো নেতাদের ইতিহাস। মোজাফফর আহমদ ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের হয়ে নির্বাচন করেন তার জন্মস্থান দেবিদ্বার থেকে। তত্কালীন মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি তখন নির্বাচনে হারান।
১৯৬৬ সালের দিকে নিজেদের দ্বন্দ্বে দুই ভাগ হয়ে যায় বামপন্থিরা। একটা পক্ষ চলে যায় বেইজিংপন্থির দলে, একটা পক্ষ চলে যায় মস্কোপন্থি দলে। তখন মোজাফফর আহমদ হন মস্কোপন্থি পূর্বাঞ্চলে নেতা। ৬৯-এর যে গণঅভ্যুত্থান এ দেশে সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রধান ভূমিকায় ছিল বামপন্থিরা। এই গণঅভ্যুত্থানের দায়ে জেলও খেটেছিলেন মোজাফফর আহমদ।
বর্তমান সময়ে মোজাফফর আহমদের মতো জনবান্ধন নেতার খুব অভাব। যারা রাজনীতি করেছেন তারা কেবল জনকল্যাণ কামনায় সর্বক্ষণ ব্যস্ত থেকেছেন। আজকের ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতিকে জনকল্যাণমুখী করতে কমরেড মোজাফফররা থাকবেন উদাহরণ হয়ে। এই ভাষা সৈনিকের বিদায়ে বাংলার আকাশ থেকে খসে পড়ল আরো একটি নক্ষত্র। বাংলার মানুষ এক নামেই চিনত তাকে। তার নাম ও প্রতীক মিলিয়ে বেশ মজার একটি শ্লোগান মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। তা হলো ‘মোজাফফরের কুঁড়েঘর’ কৃষক ও শ্রমিকদের প্রিয় নেতা ছিলেন মোজাফফর আহমদ।
পুত্রসন্তান না থাকায় মেয়ের সঙ্গে থাকতেন ঢাকাতে। তার গড়া ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি) এখন অনেকটাই স্থবির। নিজ এলাকা দেবিদ্বারেও ছিল না ন্যাপের তেমন কোনো কার্যক্রম। বাংলার রাজনীতির এই বরপুত্র জন্মেছিলেন ১৪ এপ্রিল ১৯২২ সালে দেবিদ্বারের এলাহাবাদে। এমন বড়ো মাপের রাজনীতিবিদ গত ২৩ আগস্ট চলে গেছেন না- ফেরার দেশে। এই রাজনীতিবিদ আদর্শ হয়ে থাকবেন আগামীর জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।
লেখক :শিক্ষার্থী, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা