ম্যালেরিয়ার ওষুধ কি আসলেই করোনা সারাতে পারে? - দৈনিকশিক্ষা

ম্যালেরিয়ার ওষুধ কি আসলেই করোনা সারাতে পারে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ, যেমন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন, এগুলোকে বেশ কিছু দিন ধরেই করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বেশ কিছু দেশের নেতা এর পক্ষে কথা বলেছেন। শুক্রবার (২৯ মে) বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জ্যাক গুডম্যান ও ক্রিস্টোফার জাইলস।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মি. ট্রাম্প তো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। কিন্তু এগুলো আসলে কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে।

তাহলে কথা উঠছে, এই ওষুধগুলো সম্পর্কে আমরা আসলে কতটুকু জানি?

কেন এই ওষুধগুলো নিয়ে এত আলোচনা?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মে মাসের প্রথম দিকেই বলেন, তিনি কোভিড ১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়েছেন, তবে পরে তিনি তা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

মি. ট্রাম্প হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন হোয়াইট হাউসে তার ব্রিফিংগুলোতে।

এপ্রিল মাসে তিনি বলেন, “‍এটা খেয়ে দেখুন। আপনার তো হারানোর কিছু নেই।”

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো এক ভিডিওতে দাবি করেন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সব জায়গায় কাজ করছে।

পরে অবশ্য ফেসবুক ওই ভিডিওটি মুছে দেয়, কারণ তা তাদের ভুয়া তথ্য সম্পর্কিত গাইডলাইনের লঙ্ঘন।

তবে মি. ট্রাম্পের মন্তব্যের পর খবর বেরোয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইনের উপস্থিতি বেড়ে গেছে।

এসব কারণে এই ওষুধ দুটি যে প্রচার পায় - তাতে বিশ্বব্যাপী এর চাহিদাও বেড়ে যায়।

তাহলে এ দুটি ওষুধের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কেন?

বৈজ্ঞানিক মহলে এসব ওষুধ দিয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে।

এটা ঠিক যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া লুপাস বা আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্যও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু কোভিড -১৯ চিকিৎসায় এর প্রয়োগ নিয়ে কোন ক্লিনিক্যাল জরিপ চালানো হয়নি। কোন পরীক্ষাতে এমন সুপারিশও করা হয়নি যে কোভিড সারাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাত্র কয়েকদিন আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কয়েকটি জরিপ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণ হলো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ওপর চালানো কিছু জরিপে দেখা গেছে এর ব্যবহারের ফলে হৃদপিণ্ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়ে কোভিড-১৯ সারানোর চেষ্টা করার বিরুদ্ধে এর আগে সতর্কবাণীও দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এর পর একটি জরিপে আভাস দেয়া হয় যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বরং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

এর পরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ নিয়ে জরিপ বন্ধ করে দেবার কথা ঘোষণা করে।

ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল করোনাভাইরাস রোগীদের মেডিক্যাল রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখতে পেয়েছে যে এই দুটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে কোন সুফল পাওয়া যায় না – বরং এতে হৃদপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ দুটি ওষুধ যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর – এমন কোন প্রমাণ আছে কি?

একাধিক দেশে করোনাভাইরাস-জনিত অসুস্থতা রোধ করতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবঙ ক্লোরোকুইন ব্যবহারের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এসব জরিপের অংশ হিসেবে যারা ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্য কর্মী - অর্থাৎ যারা সরাসরি সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে আসেন - তারা এ ওষুধ দুটি ‘নিরোধক’‌ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় একটি জরিপ শুরু হয়েছে – যাতে ৪০ হাজার লোককে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, ক্লোরোকুইন অথবা একটি প্লাসিবো দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে যে কোভিড-১৯ ভাইরাস ঠেকাতে এ দুটি ওষুধ কার্যকর কিনা।

যে রোগীরা ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এ দুটি ওষুধ কোন ভাবে সহায়ক কি না – তা নিয়েও কয়েকটি পরীক্ষা চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন নামে একটি অ্যান্টিবায়োটিক – এই তিনটি ওষুধ মিলিয়ে ব্যবহার করে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা যায় কি না - তার একাধিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

নাইজেরিয়া বলেছে তারা এ দুই ওষুধের যে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা তা চালিয়ে যাবে।

নাইজেরিয়ার ওষুধ প্রশাসন বলেছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে না – তবে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করতে চায়।

মরক্কো, আলজেরিয়া ও সেনেগাল তাদের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালিয়ে যাবার কথা বলেছে। শুধু কেনিয়া বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের পর তারা তাদের জরিপগুলো স্থগিত করছে।

এসব গবেষণা থেকে যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তা যথেষ্ট নয়। ফলে কোভিড রোগ প্রতিরোধ বা এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কার্যকর হবে কি না – তা নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না।

তা ছাড়া কিডনি ও লিভারের ক্ষতির মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও আছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এসংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রের রচয়িতা কোমে গবিনিগি বলেন, “ক্লোরোকুইন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে হলে আরো বড় আকারের এবং উচ্চ মানের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা প্রয়োজন।”

এ ওষুধগুলো কি কোন দেশ ব্যবহার করছে?

মার্চ মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) সেদেশের হাসপাতালগুলোয় কিছু সীমিত সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য “জরুরি ক্ষেত্রে” এসব ম্যালেরিয়ার ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।

এর অর্থ হচ্ছে শুধু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলো সরকারি মজুত থেকে এই ওষুধগুলো চাইতে এবং কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করতে পারে।

কিন্তু ২৪শে এপ্রিল এফডিএ এর বিপদ সম্পর্কে একটি সতর্কবাণী ইস্যু করে। এতে বলা হয়, এ দুটি ওষুধ ব্যবহারের ফলে রোগীদের হৃদপিন্ডের ছন্দে সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

কিছু কিছু দেশ বিভিন্ন মাত্রায় ম্যালেরিয়া-রোধী ওষুধগুলো ব্যবহার করছে।

ব্রাজিল সম্প্রতি এ দুটি ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেবার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পর যেসব বিধিনিষেধ ছিল - তা শিথিল করেছে।

ভারতের সরকার রোগপ্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার সম্প্রসারিত করেছে – তবে তা শুধুমাত্র ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে।

ফ্রান্স এক পর্যায়ে হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল কিন্তু দেশটির চিকিৎসা সংক্রান্ত নজরদারি প্রতিষ্ঠান এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেবার পর সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করা হয়।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013163089752197