ময়মনসিংহ শহরজুড়ে রমরমা কোচিং বাণিজ্য - দৈনিকশিক্ষা

ময়মনসিংহ শহরজুড়ে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেট এখন পড়াশোনার নিয়মিত অংশ হয়ে গেছে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমান্তরালভাবে চলছে এসব কোচিং-প্রাইভেট। শিক্ষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা নানা নামে চালাচ্ছেন এগুলো। এই কোচিং বাণিজ্যের কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। এ জন্য বাধ্য হয়েই তাঁদের সন্তানদের কোচিং-প্রাইভেটে পাঠাতে হচ্ছে। যদিও কোনো কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, শুধু স্কুল-কলেজের দোষ দিয়ে লাভ নেই; বাস্তবতা হলো, অভিভাবকেরা মনে করেন, কোচিং-প্রাইভেটে না পড়ালে বোধ হয় তাঁদের সন্তানেরা ভালো করতে পারবে না।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ শহরের নাহা রোড, বাউন্ডারি রোড, রামবাবু রোড, জিলা স্কুল রোডসহ কয়েকটি সড়কে কোচিং-প্রাইভেট বেশ রমরমা। এসব এলাকায় গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন সকাল-বিকেল, এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকে। স্কুল-কলেজের সমান্তরালে শ্রেণিকক্ষের মতো আয়োজন করে এসব প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে পড়ানো হচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখানে বেশি পড়তে আসে। আবার আছে ভর্তি কোচিং।

একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার অসংখ্য শিক্ষার্থী শুধু কোচিং-প্রাইভেট পড়তে ময়মনসিংহে থাকে। বাউন্ডারি রোড এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনে কথা হয় এমন একজন ছাত্রের সঙ্গে। সদ্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেওয়া এই ছাত্রের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে। সেখানকার বিলডুবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে সে। তবে প্রায় দুই বছর ধরে সে ময়মনসিংহ শহরেই থাকে। শুধু পরীক্ষার সময় হালুয়াঘাটে যেত সে। এখন আবার ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তির জন্য কোচিং করছে। সে জানাল, তাদের (এক ভাই ও এক বোন) পড়াশোনার জন্য এখন তার বাবা-মা ময়মনসিংহে চলে এসেছেন। বাবা ওষুধের দোকান দিয়েছেন।

শহরের নাহা রোড, বাউন্ডারি রোড, রামবাবু রোড, জিলা স্কুল রোডসহ কয়েকটি সড়কে কোচিং-প্রাইভেট বেশ রমরমা।
বিভিন্ন জায়গায় সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিয়ে কোচিং সেন্টার চালানোর তথ্য থাকলেও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের লাইসেন্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা জানালেন, এক বছর ধরে লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়নের কোনো তথ্য তাঁদের জানা নেই। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বললেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করছেন কোচিং-প্রাইভেট নিয়ন্ত্রণের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা (বেসরকারি বেশি) যেমন এসব কোচিং-প্রাইভেটের সঙ্গে জড়িত, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে অনেকে কোচিং সেন্টার খুলেছেন। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নাহা রোডে অবস্থিত কবির সৃজনশীল একাডেমি নামে একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি শ্রেণিকক্ষ ও পাশেই আরেকটি ছোট দাপ্তরিক কক্ষ। এই দুই কক্ষ নিয়ে চলছে কোচিং সেন্টারটি। এখানে পড়ান শহরের বেসরকারি অ্যাডভান্স রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষক। অবশ্য তখন তিনি ছিলেন না। অফিসের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরই এক আত্মীয় ফারুক মিয়া। তিনি জানালেন, এখানে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ানো হয়। একেকজন ছাত্রকে পাঁচটি বিষয়ে মাসে (সপ্তাহে তিন দিন করে) ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়। সপ্তাহের শুক্রবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। বেলা একটার পর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পড়ানো হয়।

এর ঠিক পাশেই দেখা গেল রবিন স্যারের রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান পড়ানোর সাইনবোর্ড। পাশেই প্রেরণা নামে আরেকটি কোচিং সেন্টার। বাউন্ডারি রোডে গিয়ে দেখা গেল আইডিয়াল এডুকেয়ার, আদর্শ একাডেমি, ইকরা কোচিং সেন্টার, সাঈদ বিজ্ঞান একাডেমিসহ অসংখ্য কোচিং-প্রাইভেট সেন্টারের সাইনবোর্ড।

বাউন্ডারি রোডে কথা হয় ধোবাউড়া উপজেলার লিমন সরকারের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে কোচিংয়ে পড়ার ব্যাপকতা ও খরচের একটি চিত্র পাওয়া গেল। সে ময়মনসিংহের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। থাকে শহরের আকুয়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে। তাঁর কলেজে ক্লাস হয় সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত। এরপর তাঁকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়তে হয়। ছাত্রটি জানাল, প্রথমে বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত কলেজেই রসায়ন বিষয়ে মাসে ৫০০ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত ক্লাস করে সে। সেখানে ক্লাস শেষে মেসে গিয়ে খেয়ে আবার বের হয় প্রাইভেটের জন্য। বেলা তিনটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কলেজের বাইরের সাইফুল স্যার নামে একজনের কাছে পদার্থবিজ্ঞান পড়ে। এ জন্য মাসে (সপ্তাহে তিন দিন) ৮০০ টাকা দিতে হয়। এরপর বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গণিত প্রাইভেট পড়ে গৌতম স্যার নামে আরেকজনের কাছে। সেখানেও মাসে ৮০০ টাকা দিতে হয়। এগুলো রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবারের রুটিন। শনিবার, সোমবার ও বুধবার অন্য শিক্ষকদের কাছে অন্য বিষয়ে পড়ে সে। ওই সব দিনে বেলা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত মাসে ৮০০ টাকার বিনিময়ে মুহিত স্যারের কাছে জীববিজ্ঞানে প্রাইভেট পড়ে। আর সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ইংরেজি পড়ে। ইংরেজির জন্য তাঁকে মাসে ৭০০ টাকা দিতে হয়। প্রাইভেট খরচের বাইরে মেস ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা, খাবার খরচ ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। বাসায় যিনি রান্না করে দেন, তাঁকে দিতে হয় মাসে ৩০০ টাকা। আর কলেজে মাসে বেতন ১ হাজার ৮০০ টাকা। অর্থাৎ কোচিং-প্রাইভেট মিলিয়ে কৃষক পরিবারের সন্তান লিমনের মাসে প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ তো গেল খরচের চিত্র। কিন্তু পড়াশোনার এই চক্রে ছাত্রটি খেলাধুলার কোনো সময়ই পায় না।

ময়মনসিংহের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যাময়ী স্কুল। এখানকার ছাত্রীরাও প্রাইভেট পড়ে ও কোচিং করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে ক্লাসে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ময়মনসিংহে কোচিং-প্রাইভেট এমন একটি প্রবণতা হয়েছে যে অভিভাবকেরা সন্তানদের সেখানে পাঠাচ্ছেন। তাঁর পরামর্শ, অন্তত স্কুল-কলেজ চলাকালীন কোচিং-প্রাইভেট বন্ধ রাখা উচিত।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051150321960449