যথার্থ সৃজনশীল হয়ে গড়ে উঠুক শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

যথার্থ সৃজনশীল হয়ে গড়ে উঠুক শিক্ষার্থীরা

ফাতিমা তাহসিন |

আমাদের সময়ে ১ম-২য় শ্রেণীতে আমরা তিনটি মাত্র বই পড়তাম। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। ৩য় শ্রেণী থেকে ছয়টা বই পড়তে শুরু করেছিলাম। এরপর একসময় শুরু হল সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান উদ্দেশ্য হল- একজন শিক্ষার্থীকে ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে এগিয়ে নেয়া; সৃজনশীল চিন্তা ও কাজকর্মের মাধ্যমে মেধা কাজে লাগানোর নিশ্চয়তা প্রদান। অর্থাৎ মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটানোই সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এতবছরেও আমরা কি এসব উদ্দেশ্য পূরণের কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি?

শিক্ষাব্যবস্থা ‘সৃজনশীল’ নামধারণ করলেও বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে- আমাদের শিক্ষকদের মধ্যেই পর্যাপ্ত সৃজনশীল জ্ঞানের অভাব; তারা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না অথবা নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যে সৃজনশীলতার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হবে, সেটা আশা করাও একরকম সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিছু চাওয়া!

সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য- গতানুগতিক পাঠ্যবইয়ের বাইরেও একজন শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান। কিন্তু বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামত নিলে শোনা যায়- তাদের শিক্ষকরা নির্দিষ্ট কোনো বই বা নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষক প্রদত্ত লেখা থেকে রচনা ও ভাব সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলোও হুবহু মুখস্থ করতে বাধ্য করে থাকে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় খাতায় নিজের মতামত ও চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করতে পারে না।

সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং কতিপয় শিক্ষকের ব্যবসাও সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কোচিং সেন্টার ও শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে কোচিং অথবা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে বাধ্য করছে, সৃজনশীলতার নামে টাকার বিনিময়ে কতগুলো ‘শিট’ ধরিয়ে দিচ্ছে।

সৃজনশীলতার নামে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসম প্রতিযোগিতা। শিক্ষক ও অভিভাবকরা পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই একজন শিক্ষার্থীকে যাচাই করছে। যেভাবেই হোক আমার ছেলে অথবা মেয়েকে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে- এরকম মনোভাব থেকেই অভিভাবকরা সন্তানদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন, তাদের নিয়ে কোচিং সেন্টার বা শিক্ষকের কাছে দৌড়াচ্ছেন। ফলে যেসব শিক্ষার্থীর কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য নেই অথবা পড়ছে না; তাদের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে একসময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

এখনকার শিশুরা ১ম-২য় শ্রেণী থেকেই ৭-৮টা বই পড়তে বাধ্য হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, ওদের পিঠের ব্যাগের ওজনের ফলে ওরা ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না! ৭-৮টা বই পড়তে গিয়ে ওরা না পাচ্ছে খেলার সময়; না পাচ্ছে গল্পের বই পড়ার সময়। এর ফলে ধীরে ধীরে ওরা বাক্সবন্দি হয়ে পড়ছে।

আজকাল বিভিন্ন স্কুলে লটারির মাধ্যমে একজন ছাত্রের ভর্তি নিশ্চিত করা হয়। নটর ডেম কলেজ, সেন্ট যোসেফ কলেজ ও হলিক্রস কলেজ ছাড়া অন্য কলেজগুলোয় এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতেই একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। এই ভর্তি পদ্ধতিতেও কি সৃজনশীলতার নামে একরকমের ফাঁকফোকর রাখা হচ্ছে না? বস্তুত সৃজনশীলতার নামে যে প্রতিযোগিতা চলছে, সেই প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেকেই অবৈধ পথে পা বাড়াচ্ছে এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সৃজনশীল নামধারণ করলেও আমরা মূলত এতবছরেও গতানুগতিক পাঠ্যবই এবং মুখস্থবিদ্যা থেকে নিজেদের চুল পরিমাণ নড়াতে পারিনি; বরং দিন দিন মুখস্থবিদ্যা আরও বাধ্যতামূলক হয়ে যাচ্ছে। বয়স ও ধারণক্ষমতার তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর পাঠ্যবইয়ের চাপ, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে এ ধরনের মানসিক অত্যাচার না করে তরুণ প্রজন্মকে মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটানোর সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য এখন প্রয়োজন ওপর মহলের সচেতনতা, শিক্ষকদের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অভিভাবক ও তরুণ প্রজন্মের সংশ্লিষ্টতা।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: যুগান্তর

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079209804534912