যশোরের বালিয়াডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ঋষি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বলেছেন, ‘তুই তো মুচি, তোর লেখাপড়া শিখে কী লাভ? তুই যদি পরীক্ষায় পাসও করিস তারপরেও আমরা তোরে পরের ক্লাসে তুলব না।’ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সংবাদ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, এ নিয়ে গতকাল বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয় পড়–য়া ঋষি সম্প্রদায়ের ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা লাগাতার বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছেন। সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা এর প্রতিকার চেয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গত ৫ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগও করেছেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোন প্রতিকার মেলেনি। বরং উক্ত অভিভাবকদের নানা হুমকি দেয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দলিত পরিষদের জেলা কমিটি গত শনিবার যশোরে মানববন্ধন করেছে।
স্বাধীন গণতান্ত্রিক একটি দেশের বিদ্যালয়ে বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছে- এমন খবর মেনে নেয়া কষ্টকর। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমেই বর্ণবৈষম্য সংঘটিত হচ্ছে। খোদ প্রধান শিক্ষক এ বৈষম্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য বোধ এতই তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে যে শিক্ষার্থীদের সাধারণ অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত করছে। একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে পরবর্তী শ্রেণীতে উন্নীত হতে পারছে না। বোঝা যাচ্ছে, বর্ণবৈষম্যে উক্ত শিক্ষকদের দেখার চোখ অন্ধ, শোনার চোখ বধির হয়ে গেছে আর ভাবার মনটি মরে গেছে।
বর্ণবৈষম্যবাদীদের ভূত-প্রেত এ দেশের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেন কীভাবে সেটা ভেবে আমরা বিস্মিত হই। আমরা এটা দেখে আরও বিস্মিত হই যে, বর্ণবৈষম্যের গুরুতর অভিযোগ জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা কেন নেয়নি। উক্ত বিদ্যালয়ের ভূত-প্রেত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ওপরও আছর করেছে কিনা সেটা জানা জরুরি। শিক্ষক নামধারী উক্ত বিদ্যালয়ের বৈষম্যবাদীরা মানুষ হিসেবে অধম হলেও, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে তারা কম নন। প্রভাবের বলেই তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধমক আর ঋষিপাড়ার অভিভাবকদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশে বর্ণবৈষম্যের কোন স্থান নেই। উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অভিযুক্ত সব শিক্ষককে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দেশের কোথাও কোন প্রতিষ্ঠানে বর্ণবৈষম্যবাদীদের যেন স্থান না হয় সেটা সরকারকে কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।