কথায় আছে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাটক-সিনেমায় এই প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়। তবে বাস্তবে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে। কলেজটির ছত্রে ছত্রে অনিয়ম আর দুর্নীতির সব চিত্র বেরিয়ে আসছে। যা এতদিন চাপা দিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। বলছি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর কলেজের কথা।
আরও পড়ুন: তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিও নেয়ার অভিযোগ
৬ শিক্ষার্থীকে পড়াতে এমপিওভুক্ত ৪ শিক্ষক, পেয়েছেন বকেয়া বেতনও
শিক্ষার্থীর প্রকৃত তথ্য গোপন করে শিক্ষকদের শুধু এমপিও করা হয়নি। এক সাথে একাধিক শিক্ষক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুই একজন শিক্ষক নন, একাধানে বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের সাত শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দিনু এসব জালিয়াতির হোতা। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ ম্যানেজ করে সাবেক এই বিএনপি নেতা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এমন জালিয়াতি করে আসছেন।
জানা যায়, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে যশোর-ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মহেশপুরের যাদবপুর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন চৌগাছার মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হাবিবুর রহমান এবং মহেশপুরের জলুলী দাখিল মাদরাসার শিক্ষক হাফিজুর রহমান। এই তিন শিক্ষক কলেজে যোগাদান করলেও তাদের আগের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা অব্যাহত রাখেন এবং এমপিও অনুযায়ী নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। তবে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে যাদবপুর কলেজটিকে সরকার এমপিওভুক্ত করলেও সেই তালিকায় ডাবল চাকরি করা শিক্ষকদের নাম উঠান অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দিনু।
এজন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এরিয়ার হিসেবে এক বছরের বেতন-ভাতা পান তারা। একই সাথে তারা এখনো স্ব স্ব স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এছাড়া এই কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগে বর্তমানে মাত্র ছয়জন শিক্ষার্থী আছেন। যাদের পাঠদান করাতে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে চারজন শিক্ষককে। আর ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী আছে ২৪ জন। যাদের পড়াচ্ছেন আরো চার শিক্ষক। এসব শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ অবৈধভাবে হাতবদল হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের এমপিও আবেদনের অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষার্থী থাকতে হবে অন্তত ৫০ জন। তবে অধ্যক্ষ নিজের ‘যোগ্যতায়’ বিজ্ঞান বিভাগে ছয়জন ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ২৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও দুইটি বিভাগের সব শিক্ষকের এমপিও করিয়ে এনেছেন।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দিনু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গ্রামের সব কলেজে এমন সমস্যা আছে। শুধু আমার কলেজ না, অধিকাংশ কলেজে বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। তবে মানবিক বিবেচনায় সব শিক্ষকের এমপিও এর জন্য আমি আবেদন করেছিলাম। আশা করি আগামীতে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবো।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রাব্বানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যখন যাদবপুর কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন করা হয়েছে তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই কীভাবে এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকার পরেও কলেজটির একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন করা হলো তা আমি বলতে পারছি না। তবে, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর অনিয়ম করে স্বীকৃতি নবায়ন করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।