দক্ষিণ এশিয়ায় কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের চেয়ে উচ্চঝুঁকিতে ভারত। সেই ভারতের শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু কভিডের কথা বলে ভিসা দেয়া হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের।
গতকাল ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোয় কভিড-১৯ পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ ছিল, সেখানে ভিসা এরই মধ্যে চালু হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট ভারতের আমেরিকান দূতাবাস শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া শুরু করেছে। শ্রীলংকায় যা শুরু হয় ২১ আগস্ট। পাকিস্তানে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসা চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। দূতাবাস থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কভিডের কারণে ভিসা চালু করতে পারছে না, বিষয়টি তারা বিবেচনায় রেখেছেন। তবে মার্কিন দূতাবাস কভিড-১৯-এর কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ভারতকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে (লেভেল ৪) রেখেছে। যেখানে বাংলাদেশ রয়েছে লেভেল ৩-এ। পাকিস্তান, শ্রীলংকা, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ভিয়েতনামে ভিসা চালু হয়েছে। এ দেশগুলো ঝুঁকির তালিকায় লেভেল ৩-এ রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন সরকার ফুলব্রাইট ক্যাটাগরিতে গত আগস্ট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভিসা দিয়েছে। যদি ফুলব্রাইট শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া হয়, তবে বাকি সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীও ভিসা পাওয়ার দাবি রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার উদ্দেশে একজন শিক্ষার্থীর বিনিয়োগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী তাদের তিন থেকে পাঁচ বছরের প্রস্তুতি নিতে হয়। এজন্য জিআরই বা টোফেলে ১৭ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন ও নথি পাঠানোতে খরচ ৮৬ হাজার টাকা, ভিসা ফি ১৩ হাজার ৭০০ টাকা এবং অন্যান্য খরচ ১০ হাজার টাকার মতো হয়। একজন শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটি দ্বিগুণও হয়। শিক্ষার্থীরা ভিসা না পেলে এক সেমিস্টারের অর্থসহ পুরো টাকাই লোকসান হবে। পাশাপাশি যদি সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী জানুয়ারি সেশন ধরতে না পারে তবে স্টুডেন্টশিপও হারাবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে অনেকের বৃত্তি গ্রহণ করছে না। ফলে এসব শিক্ষার্থী ২০২১ সালের মার্চ সেমিস্টারের জন্য অপেক্ষা করছে। ২০২১ সালেও যদি ভিসা দেয়া শুরু না করে তবে সেমিস্টার আর বিলম্বিত করার সুযোগ থাকবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একবারই বিলম্বিত করার সুযোগ দেয়। ফলে চলতি বছর তিনটি সেমিস্টারে বাংলাদেশ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী ভিসার কারণে আটকা পড়ে আছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কভিড পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস সীমিত পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে। তাই এ মুহূর্তে ভিসা কার্যক্রম সীমিত রয়েছে। আর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বাংলাদেশের থেকে বড় আকারে দূতাবাস পরিচালিত হচ্ছে। তাই সেখানে ভিসা চালু সম্ভব হয়েছে।