আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্যা রাজাকারের মুক্তি চাওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাঈদীর মুক্তি দাবি করে শিক্ষক নুরুল আলমের পোস্ট ও তার পক্ষে কমেন্ট করা এবং পেইজটির এডমিনদের খুঁজে বের করা হবে। এ সংক্রান্ত দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সাধারণ ছুটির পর অফিস খুললেই ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালরের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত ২৪ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার খবর প্রকাশের পরপরই বেসরকারি শিক্ষক ফোরাম নামের একটি ফেসবুক পেইজের এডমিন ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক নুরুল আলম সন্ধ্যায় প্রথমে সাঈদীর মুক্তি দাবি করেন। এরপর দাবির পক্ষে সারাদেশে জনমত গঠনের আহ্বান জানান নুরুল আলমের সমমনা অন্যান্য শিক্ষকরা। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া রাজাকার কাদের মোল্লার পক্ষেও কমেন্ট করেন নুরুল আলম।
তারই প্রেক্ষিতে সরকারি বেতনভুক্ত জামাতপন্থি এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই সাঈদীর ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগে রংপুরের বদরগঞ্জে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ওই ভিডিও চিত্র শেয়ার করেছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রভাষক আহসান হাবীব। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। তাই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে শিক্ষক আহসান হাবীবের কর্মকাণ্ডকে অপতৎপরতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
এদিকে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সারাদেশে মানুষ যখন আতঙ্কিত ঠিক তখন সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য ও ছবি প্রকাশ করার অভিযোগে দুই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত দুইজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সাথে দুই শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত কুখ্যাত দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর মুক্তি দাবি করা শিক্ষকদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করেছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। গতকাল ২৫ মার্চ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণট্রাস্টের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু দৈনিক শিক্ষায় পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক ফোরাম নামের ফেসবুক পেজের এডমিনদের খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। নুরুল আলম কীভাবে শিক্ষক বাতায়নের অ্যাম্বাসেডর হলেন? সরকারের বেতন-ভাতা নিয়ে কীভাবে আদালতের রায়ে সাজাভোগ করা রাজাকার সাঈদীর মুক্তি দাবি করে?
শাহজাহান আলম সাজু আরও বলেন, ‘যারা রাজাককার শিরোমণি যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত দেলোয়ার হোসেন সাঈদির মুক্তি চায় তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। ফোরামের পেইজ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো নতুন ঘটনা নয়। ফোরামের ব্যানারে কারা সংঘবদ্ধ হয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের উসকানি দিচ্ছে রাজাকার সাঈদির মুক্তির দাবির মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে তা আজ পরিষ্কার হয়েছে।’
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল হওয়ার দৈনিক সংগ্রাম আর কোনো সরকারি বা কোনো সংস্থার বিজ্ঞাপন পাবে না। এছাড়া স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় নিয়োগ বিজ্ঞাপনের জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, মিডিয়া তালিকায় না থাকায় সংগ্রামে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞাপন কার্যকর হবে না।
আরও পড়ুন : সাঈদীর মুক্তি চায় জামাতপন্থী শিক্ষকরা
সাঈদীর মুক্তি দাবি করা শিক্ষকদের শাস্তি চায় স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ