ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের একটি বাসভবন থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশান ২ এর ৫৯ রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব।
এর আগে রাজধানীর মতিঝিল ফকিরাপুল এলাকায় তার মালিকানাধীন ‘ইয়াং ম্যান্স ফকিরেরপুল ক্লাবের ক্যাসিনোতে র্যাব অভিযান চালায়। এসময় ক্যাসিনো থেকে ১৪২ জনকে আটক সহ, বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করেছে র্যাব।
আরও পড়ুন:
কে এই যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ?
মধ্যরাতে হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে যুবলীগ কার্যালয়ে সম্রাট
বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এবং র্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে র্যাব-৩।
অবৈধভাবে চালানো এই ক্যাসিনোর মালিক মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া।
সারওয়ার আলম জানান, বিকেল ৫টা থেকে ‘ইয়াং ম্যান্স ফকিরেরপুল’ নামের ক্যাসিনোতে অভিযান চলে। এতে ১৪২জন আটক ও বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করা হয়েছে। আটকদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারের সময় খালেদের বাসা থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার কারণে বাসায় থাকা আরও দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নগদ ১০ লাখ টাকা ও কিছু ডলার উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাসা থেকে ।
অন্যদিকে ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জন নারী পুরুষকে আটক করেছে র্যাবের আরেকটি টিম। ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। ওই ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদ। ক্লাবের আড়ালে তিনি সেখানে জুয়া ও মদের আসর বসাতেন। সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল জুয়া সামগ্রি, মাদক, ও নগদ ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে ক্লাবে অভিযান চালানোর পাশপাশি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তাকে আটক করা হয়। রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে বস্তিতে বেড়ে উঠা খালেদ যুবলীগের নেতা হওয়ার পর চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও জুয়া ও মদের আসর বসিয়ে অর্থ আয় করতেন। নিজে দেহরক্ষীসহ প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন।
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পর যুবলীগ নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের দোয়া অনুষ্ঠান ও যুব জাগরণ সমাবেশের প্রসঙ্গ এলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।
খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
৭ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ
জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এ নেতা। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।