ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়া যুবলীগকে উদ্ধারের এ দায়িত্ব তিন বছর পালন করবেন পরশ-নিখিল। শেখ ফজলে শামস পরশ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের কংগ্রেসের উদ্বোধন করার পর বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বসে কাউন্সিল অধিবেশন।
পঁচাত্তর ট্রাজেডিতে বাবা-মাকে হারানো পরশ ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজের থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও রাজনীতির মাঠে দেখা যেত না তাকে। এমনকি ছোটভাই তাপসের নির্বাচনী প্রচারেও তাকে খুব-একটা নামতে দেখা যায়নি।
যুবলীগ থেকে বিদায় নেওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সম্পর্কে পরশের ফুপা। ভাবমূর্তি সঙ্কটে থাকা যুবলীগকে উদ্ধারে ফুপু শেখ হাসিনার নির্দেশে পরশ এবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য যুবলীগের যে কমিটি হয়েছে, তাতে আকস্মিকভাবে পরশের যুক্ত হওয়া দেখে তার নাম সবার আলোচনায় আসে।
সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিবেশনে কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে পরশের নাম প্রস্তাব করলে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ তা সমর্থন করেন। এ পদে আর কোনো নামের প্রস্তাব না ওঠায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পরশ।
পরে অধিবেশনস্থলে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল বর্তমান পদবি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ভিত কেঁপে ওঠে যুবলীগের। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করার পর এক পর্যায়ে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ওমর ফারুক চৌধুরীকে। পরে যুবলীগ পরিচালনায় গঠিত হয় কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটি।
যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে কে আসছেন, তা নিয়ে গত বেশ কিছুদিনের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির দুই ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ ফজলে শামস পরশের নামই।
সংসদ সদস্য তাপস বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সাবেক ছাত্র ফজলে শামস পরশ এতদিন রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিত্ব হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। শেষ পর্যন্ত পরশকেই দেওয়া হলো আওয়ামী লীগের যুবসংগঠনের প্রধান দায়িত্ব।