১০ কারণে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষকের মর্যাদা দেয়া উচিত - দৈনিকশিক্ষা

১০ কারণে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষকের মর্যাদা দেয়া উচিত

এ জে নওয়াজ তালুকদার |

রাষ্ট্র ও ধর্মে স্বীকৃত সব পেশার প্রতি সবার শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা থাকাটাই সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য। এই গ্রহে সাতশত কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। তাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা জন্য পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য কোনও না কোনও পেশার সাথে জড়িত। 

বলা হয়ে থাকে পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে সম্মানিত পেশার নাম শিক্ষকতা। আর শিক্ষকদের প্রধান কর্মস্থল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেখান থেকে তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম কিংবা জ্ঞান বিতরণ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি, বিতরণ ও প্রয়োজনে বাতিলও করে থাকে। শিক্ষকের দেয়া জ্ঞানের আলোয়, সমাজের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর হয়।

আমরা জানি, জ্ঞানের আলো ছড়ানোর বৃহত্তম মাধ্যম হলো বই। আর এই বইয়ের লালন-পালন হয়ে থাকে গ্রন্থাগারে। বলা হয়, একটা সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে গ্রন্থাগার ব্যবহারের বিকল্প নেই।আর এই গ্রন্থাগারে গচ্ছিত থাকে বিশ্বের সব জ্ঞানী লোকদের আলোর প্রদীপগুলোর দৃশ্যমান বাস্তবতা অর্থাৎ বই বা পুস্তক। গ্রন্থাগারে থাকে বিশাল সংগ্রহশালা এবং এটিকে গড়ে তুলতে হয় প্রতিদিন নতুন করে।হাজার বছরের অতীত থেকে আজকের এই সময় পর্যন্ত সব কিছু এখানে সংরক্ষণ করতে হয় এবং রাখতে হয় সুসজ্জিত করে, নিয়ম মোতাবেক।

একজন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানে সমৃদ্ধকরণ, সুনাগরিক ও দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেই সরকার প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিক পদ সৃষ্টি করেছে। যদিও বহু বছর আগে এই পদসৃষ্টি হলেও বর্তমান সরকার হাইস্কুলের সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে জনবল নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করেছেন। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সহকারী গ্রন্থাগারিকদের এমপিওভুক্ত করা এবং ১০ম গ্রেডভুক্ত করায় সরকার বড় মনের পরিচয় দিয়ে, গ্রন্থাগারিক পেশার সবাইকে সরকারের কাছে ভালভাসার ঋণে আবদ্ধ করে রেখেছেন।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হঠাৎ চিঠি ও প্রজ্ঞাপন এবং সর্বশেষ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা জানুয়ারি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড একটা পরিপত্র জারি করে। এতে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের বেশ বেকায়দায় ফেলা হয়। ঐ পরিপত্র অনুযায়ী সহকারী গ্রন্থাগারিকরা, শিক্ষক হিসাবে গণ্য হবেন না এবং তার ফলশ্রুতিতে তারা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠনে সদস্য হতে পারবেন না। যার ফলে তাদের কর্মস্থলে অপমানজনক অবস্থায় আছেন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন ও ঈদ বোনাস সবকিছুই শিক্ষক সমমানের কিন্তু তাঁরা পরিপত্রের কারণে শিক্ষক নয়। শিক্ষক না হওয়ায় তাঁরা বোর্ড পরীক্ষার হলের দায়িত্ব কিংবা খাতা মূল্যায়নে অংশ নিতে পারছে না।পারছে না কোন ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে। যারা এই পদে কর্মরত আছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিক্ষক সমমানের এবং অতিরিক্ত হিসাবে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের ওপর কমপক্ষে এক শিক্ষাবর্ষের ডিপ্লোমাও রয়েছে। তাঁরা সবাই নিজ নিজ বিষয়ে কর্মদক্ষ এবং তাদের শিক্ষাজীবনের বিষয় (স্নাতক) অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সক্ষম। যা ইতোমধ্যে সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রুটিনে সহকারী গ্রন্থাগারিকরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

যতদূর জেনেছি ঢাকার ভিকারুননিসা ও আইডিয়াল স্কুলে কমিটিতে কে কে থাকতে পারবেন বা ভোট দিতে পারবেন তা নিয়ে লড়াইয়ের শেষ ধাপে ঢাকা বোর্ড ওই পরিপত্রটি জারি করে। যা সহকারী গ্রন্থাগারিকদের জন্য কাল হয়েছে।

এদিকে সরকার শিক্ষার্থীদের আরও যোগ্যভাবে গড়ে তুলতে রুটিনে লাইব্রেরি ঘন্টা রাখার ব্যাপারে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে।

 

প্রিয় পাঠক,

এবার সহকারী গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষকের মর্যাদা দেয়ার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরছি। 

১. সহকারী গ্রন্থাগারিকরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সাথে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের ওপর কমপক্ষে এক বছরের ডিপ্লোমাধারী।

২. সরকার কর্তৃক নির্দেশিত লাইব্রেরি ঘণ্টা রুটিনে অন্তর্ভুক্ত আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিকরা একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য।

৩. এই পদভুক্তরা শিক্ষকদের মত ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন।

৪. প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রুটিন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাঁরা সপ্তাহে গড়ে ২০টি পর্যন্ত ক্লাস নেন।

৫. শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরি ব্যবহার সহজ করা ও তাদের বইয়ের পাঠকরূপে গড়ে তুলতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা তাঁরাই রাখেন।

৬. শিক্ষার্থীদের স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত করা, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ের বই পড়া ও তাদের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে, আলোচনা ও করেন সহকারী গ্রন্থাগারিকরা।

৭. বর্তমানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে একই পদ্ধতিতে সহকারি গ্রন্থাগারিকদেরও নিয়োগ দেয়া।

৮. শিক্ষকের মর্যাদা পেলে গ্রন্থাগারিকদের আইনগত ভিত্তি মজবুত হবে এবং তাঁদের কর্মদক্ষতা ও মানসিক শক্তি দুটোই বাড়বে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা আরও উপকৃত হবে।

৯. শিক্ষক সহকর্মীদের সাথে বৈষম্য দূর হওয়ার ফলে শিক্ষাঙ্গনে আরও সুন্দর ও আনন্দময় কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হবে।

১০. সহকারী গ্রন্থাগারিকরা বিভিন্ন বিষয়ে যখন প্রশিক্ষণ পাবেন, তখন তারা নিজেকে দক্ষ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

 

প্রিয় পাঠক,

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এনটিআরসিএর পরীক্ষার বিষয় কি হবে?

আমি কিছু যুক্তি দেখিয়ে আমার লেখাটা শেষ করছি।

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৫০ নম্বরের আলাদা বিষয় চালু করা যেতে পারে। যার নাম হবে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান। বিষয়টি বর্তমান আইসিটি বিষয়ের ৫০ নম্বরের সাথে যুক্ত করে পরিপূর্ণ ১০০ নম্বরের বিষয়ও করা যেতে পারে।

 

আমি ৫০ নম্বরের খসড়া মান বণ্টন করলাম।  

বিষয়  : গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান

পূর্ণমান : ৫০

 

১. গ্রন্থাগার ব্যবহারের জন্য ১০ নম্বর

২. বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই পড়ার জন্য ১৫ নম্বর 

৩. গ্রন্থাগার সাজানো বা ব্যবহারিকের জন্য ২৫ নম্বর

 

লেখক: সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074880123138428