যেভাবে গ্রেফতার হলো ধর্ষক মজনু - দৈনিকশিক্ষা

যেভাবে গ্রেফতার হলো ধর্ষক মজনু

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক মজনুকে (৩০) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার (৮ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর কুর্মিটোলার ঘটনাস্থলের কাছে শেওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা দাবি করছেন, মজনু রেলস্টেশনে ভবঘুরে হিসেবে থাকে। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজমারা গ্রামে। বাবা মৃত মাহফুজুর রহমান। ১০ বছর ধরে ঢাকায় রেলস্টেশনে ভবঘুরে হিসেবে থাকছে। সে মাদকাসক্ত, ছিনতাই-চুরিতে জড়িত। সিরিয়াল রেপিস্ট বা ক্রমিক-ধর্ষক মজনু কুর্মিটোলার ঘটনাস্থলসহ কয়েকটি এলাকায় এই অপকর্ম চালাত।প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক নারীদের সে আটকে রেখে ধর্ষণ করত। তাদের হত্যার হুমকিও দিত। মজনু স্বীকার করেছে সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে।’

ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে ও ধর্ষণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে পথ থেকে সে ঝোপের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। অন্ধকারে শারীরিক গঠন দেখে ওই ছাত্রীকে কম বয়সী প্রতিবন্ধী ভেবেছিল বলে দাবি করে মজনু। সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রীটিকে গলা টিপে হত্যারও চেষ্টা করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের কারণে সারা দেশে তোলপাড় হওয়ার বিষয়ে কিছুই সে জানে না।

র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মজনুর উপস্থিতি চিহ্নিত করে র‌্যাব। সেখানে অস্পষ্টতা থাকলেও ধর্ষিতার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মজনুর নাগাল পায় তারা। খায়রুল ইসলাম (৩৮) ও অরুণা বিশ্বাস (৪৫) নামে দুজনকে আটকের পর মোবাইল ফোনসহ মজনুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর র‌্যাব কর্মকর্তারা ধর্ষিতাকে মজনুর ছবি দেখালে তিনি তাকে শনাক্ত করেন। ধর্ষিতার বর্ণনায় সামনের দুটি দাঁত ভাঙাসহ মজনুর সব বিবরণ মিলেছে বলে দাবি র‌্যাবের। মজনুও র‌্যাবের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাবের কাছ থেকে আসামি মজনুকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছিল। ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার মজনুকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হবে। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।

গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, ‘আমরা ছাত্রীর (ধর্ষিতা) সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি, অনেকবার অভিযুক্ত মজনুর ছবি দেখিয়েছি তাঁকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছি। মেয়েটি বলেছে, এই সে ধর্ষক। আমি পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও কখনো এই চেহারা ভুলব না। নিশ্চিত করার আগে ও পরে অভিযুক্তকেও জিজ্ঞেস করেছি। সেও স্বীকার করেছে যে সে একাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, ‘মামলাটি ক্লুলেস ছিল। মূলত ভিকটিমের মোবাইলের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হই। মজনুর কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রথমে আমরা ভিকটিমের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা করি। তদন্তে আমরা দেখতে পাই, মোবাইল ফোনটি খায়রুল ইসলাম নামের একজনের কাছে ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের হেফাজতে আনা হয়। পাশাপাশি মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।’

সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, খায়রুল একজন রিকশাচালক। অরুণা বিশ্বাস নামে তার পরিচিত এক নারী তাকে ডিসপ্লে ঠিক করার জন্য মোবাইলটি দেয়। সেই সূত্রে অরুণাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে অরুণা জানায়, মজনু তার কাছে ডিসপ্লে ভাঙা একটি মোবাইল বিক্রি করে। সেটি খায়রুলকে মেরামত করার জন্য দিয়েছিল সে। ভিকটিম শিক্ষার্থী ও অরুণার কাছ থেকে মজনুর চেহারার বর্ণনা নেয়া হয়। দুজনের বর্ণনা মিলে গেলে আমরা নিশ্চিত হই সেই ধর্ষক।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর তদন্ত করে দেখি, গতকাল (মঙ্গলবার) সারা দিন মজনু বনানী রেলস্টেশনে ছিল। কড়া নজরদারিতে রেখে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে (গতকাল) তাকে শেওড়া রেলক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।’

র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, গত সোমবার থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণে সন্দেহভাজন ধর্ষকের চলাচলের দৃশ্য পায়। একইভাবে ডিবির তদন্তকারীরাও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। ধর্ষিতার মোবাইল ফোনসহ খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র ধরেও তদন্ত শুরু করে। র‌্যাবের গোয়েন্দারা প্রথমেই ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকার মধ্যে মজনুর সহযোগী ও মোবাইল ফোনের সূত্র পেয়ে যায়। মঙ্গলবার দিনেই অরুণা ও খায়রুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর মোবাইল ফোন বেচার টাকা নিতে আসার পর গ্রেফতার করা হয় মজনুকে।

মজনুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ঘটনার দিন মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর মেয়েটিকে দেখতে পায়। ব্যাগসহ শিক্ষার্থীকে দেখে সে আলোড়িত হয়। পরে মেয়েটির পিছু নেয়। এরপর টেনে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়। সেখানে সে ছাত্রীর গলা টিপে ধরে। শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়েন। ধর্ষণের পর সে মোবাইল ফোনসহ জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় চলে অসে। এরপর রাস্তা পার হয়ে রেললাইনে চলে যায়। অরুণার কাছে ফোনটি দেয়। এরপর নরসিংদী চলে যায়। মঙ্গলবার ফিরে আসে। সেদিন সে বনানী রেলস্টেশনে ছিল।’

সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে মজনুর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে আর বিয়ে করেনি। সে দিনমজুর হকার হিসেবে কাজ করার আড়ালে ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সে একজন মাদকসেবী।’

ধর্ষিতাকে একাই কীভাবে মজনু জোর করে নিয়ে গেল? তার কোনো সহযোগী ছিল কি না? অচেতন করতে চেতনানাশক ব্যবহার করা হয়েছে কি না?—এসব প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের পরিচালক বলেন, ‘মজনু মাদকাসক্ত। তখন তার পৈশাচিক শক্তি ছিল। সে ভিকটিমকে বারবার মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই মেয়েটি প্রতিরোধ করতে পারেনি। মেয়েটিকে অজ্ঞান করতে কোনো ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করেনি। তার কাছে ধারালো অস্ত্রও ছিল না। সে খর্বকায়। তার চুল কোঁকড়া এবং তার সামনের দুটি দাঁত ভাঙা। ভিকটিমের বর্ণনায়ও ধর্ষক একাই ছিল। ঘটনার পর মজনুর মধ্যে কোনো অনুশোচনা বোধও নেই।’

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, এখনো আমরা আসামিকে বুঝে পাইনি। পেলে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। পুরো রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করব আমরা। আর যদি আসামি দোষ স্বীকার করে নেয় তাহলে তা লাগবে না।’

প্রসঙ্গত, গত রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে ছাত্রীটি বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পর তাঁকে এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁকে ফুটপাতের পাশের ঝোপে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে ওই শিক্ষার্থী রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা। মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080940723419189