সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এবার ২৬ লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। নিয়োগ পাবেন ১৩ হাজার। লিখিত পরীক্ষা আগামী মার্চের মাঝামাঝি হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ। তাই দেরি না করে এখনই নিতে হবে প্রস্তুতি।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও প্রার্থীদের ৮০ নম্বরের লিখিত ও ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ২০টি করে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে।
বাংলা অংশ থেকে ২০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে। বাংলার জন্য পড়তে হবে বিশিষ্ট লেখকদের জীবনী, উক্তি, জন্ম-মৃত্যু তারিখ ও পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন অধ্যায়। ব্যাকরণের জন্য কারক ও বিভক্তি, সমাস, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, শুদ্ধিকরণ, সন্ধি, এই অধ্যায়গুলো পড়লে বাংলা অংশে ভালো করা যাবে। এ ছাড়া বিগত সালের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।
গণিতে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই খারাপ করে। এই অংশ থেকে ২০টি উত্তর করতে হয়। এতে ভালো করতে হলে পরীক্ষার্থীদের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির বিভিন্ন অধ্যায়গুলো বারবার চর্চা করা দরকার। পাটিগণিতের জন্য গড়, শতকরা, ঐকিক নিয়ম, সুদকষা, অনুপাত এই অধ্যায়গুলো ভালো করে নিয়মিত চর্চা করলে পরীক্ষায় এ থেকে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর বীজগণিতের জন্য মান নির্ণয়, উৎপাদক ইত্যাদি অধ্যায়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে। জ্যামিতিতে ভালো করতে হলে বর্গক্ষেত্র, ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক—এগুলো পড়তে হবে।
ইংরেজিতে ভালো করার সহজ উপায় হলো ভালোভাবে গ্রামারগুলো নিজের আয়ত্তে আনা। মূলত গ্রামার থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন পাওয়া যায়। তাই এ অংশের ওপর নিতে হবে বাড়তি যত্ন। ইংরেজি ব্যকরণের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো (আর্টিকেল, নাউন, সেস্পলিং, সিনোনিম্স, রাইট ফর্ম অব ভার্ব, এডজেক্টিভ, ভয়েস, ন্যারেশন, প্রিপোসিশন, কারেকশন, ট্রান্সলেশন ইত্যাদি) পড়তে হবে খুব মনোযোগসহকারে। ইংরেজিতে প্রশ্ন থাকে মোট ২০টি, যার বেশির ভাগ মৌলিক অধ্যায়গুলো থেকেই থাকে। আর দেশি-বিদেশি লেখকদের সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তাহলে সাহিত্য অংশে ভালো করা যাবে।
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। এছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়েও জানতে হবে। এ অংশে ভালো করতে বিগত বছরের প্রশ্ন, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়া, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়া পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির বোর্ডের বইয়ের ওপর দখল থাকলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতে হলে প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ জ্ঞানের বই কিনে পড়ে নিতে পারেন। তথ্যভান্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ হবে; উত্তর করা ততই সহজ হবে।
মনে রাখবেন, নিশ্চিত না হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিবেন না। এটা একেবারে ঠিক নয়। কারণ প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। তার মানে, ৪টি ভুল উত্তরের জন্য ১ নম্বর কাটা যাবে। বিষয়টি খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে তা না দেওয়াই ভালো।
লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষা হবে ২০ নম্বরে। এরমধ্যে ৫ নম্বর থাকবে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর, ৫ নম্বর প্রার্থীর নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। আর বাকি ১০ নম্বর থাকবে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণের ওপর।
পাশাপাশি প্রার্থীর নিজ জেলা বা উপজেলার আয়তন, জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদির ওপর দখল থাকলে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।