যেমন হওয়া উচিত ভবিষ্যত শিক্ষাব্যবস্থা - দৈনিকশিক্ষা

যেমন হওয়া উচিত ভবিষ্যত শিক্ষাব্যবস্থা

ড. এম এ মাননান |

বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই যে বাংলাদেশে আমরা বসবাস করেছি ১৯৭১-এ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে চারদিকে শুধু নাই আর নাই। রাস্তা নাই, ব্রিজ-কালভার্ট নাই, চলাচলের যোগ্য রেললাইন নাই, সব হানাদার বাহিনীর কারণে ছারখার হয়ে আছে। কৃষিজমি পড়ে আছে অনাবাদী। বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া রাজাকারের পেটে। হাঁস-মুরগি পাঞ্জাবিদের উদরে। হালের গরু, চাষাবাদের সরঞ্জাম, ফসলের বীজ কোনো কিছুই নাই। ধান নাই, চাল নাই, সবজি নাই। আছে শুধু সাত কোটি ক্ষুধার্ত পেট। এরকম একটি বাংলাদেশ প্রবল আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে শির উঁচু করে দাঁড়ালো। বিশ্বকে দেখিয়ে দিলো বাঙালি এক অদম্য জাতি। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা এক অমিত শক্তির বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে সগর্বে আপন স্থান করে নিয়েছে, গড়ে তুলেছে প্রায় তিনশ’ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এক বিশাল অর্থনীতি।

সুশিক্ষিত, দক্ষ তরুণদের ব্রেনড্রেন বন্ধ করে তাদেরকে উপযুক্ত কাজে লাগিয়ে মেধার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে সৃষ্টি করেছে অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলা এক গতিময় বাংলাদেশ। এ অদম্য জাতি দেখিয়ে দিল কীভাবে সময়ের প্রয়োজনে বদলে দেয়া যায় উন্নয়নের শিরদাঁড়া নামে পরিচিত শিক্ষাব্যবস্থাকে। অর্ধ-শতকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, সর্বস্তরে এনেছে বিপুল পরিবর্তন। শিক্ষার প্রথম স্তর থেকে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত একটি ভার্টিক্যাল সম্পর্ক তৈরি করে পুরো ব্যবস্থায় জীবনস্পর্শী সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনীমূলক জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্ব দিয়ে এনে ফেলেছে উন্নত বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া বিস্ময়কর পরিবর্তন, যাকে বলে বৈপ্লবিক উন্নয়ন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইতিবাচক পরিবর্তন যোগ করতে করতে এখন দেশটি বিশাল সাফল্যের শিখরে। ক্ষুদ্রকে সে ক্ষুদ্র মনে করেনি বলেই আজ ঈর্ষণীয় সাফল্যের মালিক। উন্নয়নের মই বেয়ে ওঠার জন্য প্রথমেই সে বেছে নিয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাকে। সে জানে শিক্ষা শুধু জাতির মেরুদণ্ড নয়, সবকিছুর চালিকাশক্তি, এমনকি বৈশ্বিক সংযোগের নিয়ামক। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সবকিছুর মূলেই শিক্ষা। তাই দেশটি শিক্ষাকে নিয়ে গিনিপিগ গিনিপিগ খেলা ছেড়ে দিয়ে দেশীয় গবেষক আর পরামর্শকদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স বানিয়ে বিস্তর গবেষণা করে শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে, প্রথমবারের মতো বিদেশি পরামর্শকদের দূরে সরিয়ে রেখে দেশের জ্ঞানী-গুণীদেরকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে তাদেরকে দিয়েই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছে। এবং সে কারণে সাফল্য এসে হাতে ধরা দিয়েছে। যতদিন বিদেশিদের হাতে শিক্ষাব্যবস্থা বন্দি ছিল, ততদিন গিনিপিগের খেলা চলেছে, আসল কাজ কিছুই হয়নি। হয়েছে উল্টো এবং বিধ্বংসী। বাংলাদেশ ভাগ্যবান; দেশটি অনেক বছর পর পেয়েছে একঝাঁক গণমুখী নীতিনির্ধারক, স্ট্র্যাটেজি-প্রণেতা, দক্ষ-চৌকস ব্যবস্থাপক/প্রশাসক আর ঔদার্যমণ্ডিত রাজনৈতিক সমর্থন।

কী করেছেন তারা? কী হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার হাল? আসুন, শোনাই সে স্বপ্নকাহিনি। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে অকল্পনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কীভাবে? শিশুদের বয়স ৩ বছর হলেই তাদের প্রি-প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করানো বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক গ্রামে-মহল্লায় প্রাইমারি স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিশুবান্ধব প্রি-প্রাইমারি স্কুল। ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও সুইডেনের প্রি-প্রাইমারির মডেলে উচ্চমানের শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা শিশু মনস্তত্ত্ব, শিশুর আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী, প্রশিক্ষিত। তারা শিশুদের জন্য মনোমুগ্ধকর আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে শিশুদেরকে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে, যার ফলে শিশুরা বাড়িতেই ফিরে যেতে চায় না। প্রি-প্রাইমারি পর্যায়ে একজন শিক্ষকের যেসব গুণ থাকতে হয় তার সবকিছুই রয়েছে তাদের মধ্যে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে প্রশিক্ষিত স্টাফ। কল্যাণমুখী সরকারের কল্যাণমুখী কাজের শুরুটা শুরু হয়েছে শিশুদেরকে দিয়েই। কারণ এরাইতো ভবিষ্যতে হাল ধরবে দেশটার।

প্রি-প্রাইমারির মতো প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকগণও সবাই যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্রশিক্ষণবিহীন কোনো ব্যক্তিই এখন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক হতে পারেন না। সবারই রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ব্যবহারে ত্রুটিহীন দক্ষতা; সাবজেক্ট-কনটেন্টে সঠিক জ্ঞান। প্রাইমারি শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করে বাধ্যতামূলক করায় শিক্ষার্থীদের শিখন যোগ্যতাও আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে। নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি মাধ্যমিক শিক্ষা এখন বাংলাদেশে। উচ্চ মাধ্যমিক শব্দটি তুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলোর নামও মাধ্যমিক স্কুল। কলেজে মাধ্যমিক শিক্ষা দেওয়ার রেওয়াজ তুলে দেওয়ার কারণে এখন কলেজগুলো শুধু ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষাদানেই নিয়োজিত। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না থাকলে কেউ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হতে পারে না। শিক্ষকতার চাকরিতে ঢোকার সাথে সাথেই তাদেরকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিশেষভাবে তৈরি প্রশিক্ষণ একাডেমিতে। শিক্ষার্থীকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিটি কোর্সে কমপক্ষে তিনটি প্রেজেন্টেশন করতেই হয়। কোর্সের বিষয়বস্তু অনুযায়ী শিক্ষার্থীদেরকে ফিল্ড ভিজিটে নেওয়া না হলে স্কুলের অনুমোদনই বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা যথোপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবেই গড়ে উঠছে না, তারা পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সক্ষমতাও অর্জন করছে।  

মাধ্যমিক শিক্ষাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে সাধারণ আর টেকনিক্যাল শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এমনভাবে যাতে শিক্ষার্থীরা যে স্ট্রিমেরই হোক না কেন, সমাজে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। একটি স্ট্রিম হলো ‘সাধারণ মাধ্যমিক’ শিক্ষা যা দ্বাদশ শ্রেণিতে সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ‘মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষা’ এবং অর্জন করে ‘সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট’। দ্বিতীয় স্ট্রিম হলো ‘কারিগরি মাধ্যমিক’ শিক্ষা যা সমাপ্ত করার পর শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ‘পেশাগত মাধ্যমিক পরীক্ষা’ এবং অর্জন করে ‘ভোকেশনাল সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট’।

এরপর শুরু হয় উচ্চশিক্ষা। সাধারণ স্ট্রিমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর শিক্ষাগ্রহণের পর শিক্ষার্থী অর্জন করে ব্যাচেলর ডিগ্রি। আর যারা ভোকেশনাল স্ট্রিমে লেখাপড়া করে তারা চার বছর পর অর্জন করে পলিটেকনিক ব্যাচেলর ডিগ্রি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীরা পরে এক বছর মেয়াদি মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। আর ভোকেশনাল স্ট্রীমের ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীরা একই স্ট্রিমে দুই বছর লেখাপড়া করে ‘পলিটেকনিক/ইঞ্জিনিয়ারিং মাস্টার ডিগ্রি’ অর্জন করতে পারে।

উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। খোলনলচে সব বদলে গেছে। পুরোপুরি কর্মমুখী, বাস্তবানুগ কারিকুলাম। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অংশীজনদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বিষয়বস্তু; উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। জোর দেওয়া হয়েছে গবেষণার উপর। আইটি শিক্ষা সবার জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর প্রযুত্তির জন্য বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে না। তারা রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গবেষক-বিজ্ঞানীদের দিয়ে তৈরি করিয়ে নিচ্ছে নিজেদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি। প্রত্যেক বছর প্রচুর প্যাটেন্ট রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চাহিদাসম্পন্ন বিষয়/বিভাগ খোলা হয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে; তুলে দেওয়া হয়েছে অচল বিষয়গুলো। প্রত্যেক বিষয়েই শিক্ষার্থীদের জন্য সফ্টস্কিল শেখার উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বলা যায়, সবখানে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বমানের শিক্ষা।

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠাগুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় এক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং কমন কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত করে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্বদ্যািলয়গুলোর কোয়ালিটি উন্নয়ন আর সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেওয়া হয়েছে বিপুল ক্ষমতা। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মতো নন-ইউনিভার্সিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে যাতে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের কোয়ালিটি বাড়াতে পারে। সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষার উপর। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কের সঙ্গে মিল রেখে সরকার এখন প্রতি বছর জিডিপি-এর ৬% শিক্ষার জন্য আর শিক্ষা বাজেটের ৩০% বরাদ্দ করছে উচ্চশিক্ষার জন্য।

শিক্ষিত কেরানি তৈরি করার কারখানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচিতি-সংকট কেটে গিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিভিত্তিক যে বাজার তৈরি হয়েছে তার সাথে সাযুজ্য রেখে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে। পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের সহ্য ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়েছে। শিক্ষা আইন সংসদে পাস করিয়ে নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় সত্যিকারের বিপ্লবী পরিবর্তন আনা হয়েছে। আইনের বাধ্যবাধকতা আর ইনসেন্টিভের কারণে শিক্ষকরা গবেষণামুখী। পাবলিক-প্রাইভেট দু’ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে একই রকম কারিকুলামে একই রকম শিক্ষাব্যবস্থা। সবগুলোতেই স্বচ্ছ আর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। আছে ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্সেজ (ওইআর) পলিসি, ইলার্নিং পলিসি, কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ফ্রেমওয়ার্ক, এক্রেডিটেশন বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমন ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা (স্যাট/জিআরই/জিএমএটি’র মতো)। শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ একাডেমি যা পরিচালনা করছেন উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকরা। নলেজ আপডেটের লক্ষ্যে প্রতি বছর একবার রিফ্রেসার ট্রেনিং নেওয়া সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য অপরিহার্য। প্রাথমিক/মাধ্যমিক স্কুলে সরকার দুপুরের আহারের ব্যবস্থা করায় ছাত্র-ছাত্রীরা পুষ্ট দেহমন নিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুখস্ত করায় পারদর্শী জোম্বী শিক্ষার্থীর পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন টগবগে তারুণ্যদীপ্ত বিদ্যার্থী। পরীক্ষানির্ভর শিক্ষার দিন কবেই শেষ। শিক্ষা শেষে এমন সব গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে যাদের অর্জিত শিক্ষার সাথে রয়েছে নিয়োগদাতাদের কাঙ্ক্ষিত মানের ইতিবাচক সম্পর্ক।

দশ বছরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের নীলনকশা মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আগামী দশ বছরে কোন্ খাতে কতজন গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন হবে তা হিসাব করে বের করা হয়েছে এবং সে মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। শিক্ষার্থীদেরকে টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করার উপর জোর দেওয়া হয়। চাহিদাহীন বিষয়গুলো তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নিয়োগদাতাদের চাহিদা মোতাবেক গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা, কাজের সক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে যেভাবে মানবসম্পদ তৈরি করা দরকার, ঠিক তেমনিভাবেই টেকনিক্যাল/ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর উপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজানোর কারণে কারিগরি ক্ষেত্রে তৈরি দক্ষ মানবসম্পদ বিদেশে রপ্তানি করে তৈরি হয়েছে বেকার সমস্যা লাঘব করার পথ।   

লেখাটি শেষ করছি একটি সত্য ঘটনা দিয়ে। ঘটনাটি জেনেছি আমার বন্ধুবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম মোহাম্মদ ভূঞার নিকট থেকে। কাহিনিটি ভারতের খড়গপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-এর। এখান থেকে মাস্টার ডিগ্রি পাস করা একজন ছাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরের নামকরা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করে একসঙ্গে। তিনটি থেকেই অফার আসে। সে বুঝে উঠতে পারছিল না কোনিটতে ভর্তি হবে। একদিন স্ট্যামফোর্ডের একজন অধ্যাপক ছাত্রটির মাস্টার্স সুপারভাইজারের নিকট ফোন করে ছাত্রটিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য অনুরোধ করেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাড়াকাড়ি লেগে যাওয়া কেমন ছাত্র ভারত তৈরি করে, আর আমরা? আমরাও পারি। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রম নির্ধারণ, সঠিক লোককে সঠিক দায়িত্ব দিয়ে দক্ষতা আর নৈপুণ্যের সঙ্গে কর্মী আর সম্পদ ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ প্রদান। কোয়ালিটি সম্পন্ন ছাত্র তৈরি করতে পারলে সারা বিশ্বে তার জন্য কাড়াকাড়ি লেগে যাবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধু জ্ঞানী/পারদর্শী লোকদেরই কদর। মেন্দামার্কা লোকের কোনো দামই নেই এই কঠিন পৃথিবীতে।

সুপ্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, এতক্ষণ যা পড়লেন তা একটি সুন্দর স্বপ্নের কাহিনি। এ স্বপ্ন নিয়েই পথচলা। দেখতে চাই বাস্তবেই এমনটা হয়েছে স্বাপ্নিক বাঙালির স্বপ্নের বাংলাদেশে। আসুন, সবাই মিলে মুখ খুলি, কথা বলি, নিজ নিজ ভাবনাগুলো তুলে ধরি। আমাদের সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। ষোল কোটি মানুষের ছোট্ট এ দেশটি হোক মানবসম্পদ তৈরির বিশ্বকারখানা। 

 

লেখক :শিক্ষাবিদ ও গবেষক; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007965087890625