দীর্ঘ আট বছরের পর চলতি বছর খুলতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও কার্যক্রম। বাংলাদেশ যখন সুদক্ষ কান্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়হাতে এগিয়ে চলছে, তখন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভুক্ত শিক্ষক সমাজ এমপিও ভুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বিনা বেতনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরই হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা আজ দেশে বিদেশে অবদান রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা থেকে গেছেন অভুক্ত। সন্তানের দুধ, ভালো খাবার, মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার মতো সামর্থ না থাকলেও তাঁরা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করতে কুন্ঠিত হননি।
তাদের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে সুদক্ষ কা-ারির সুদক্ষ সহযোদ্ধা এবং উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত ধরে। চলতি এমপিওভুক্তিতে চারটি মানদ-ের বিচারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এমপিও ঘোষণার কথা বলা হয়। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এগুলোর দৃশ্যমান শিক্ষার্থী ও শ্রেণিকক্ষ আছে কিনা তা আরও অধিকতর খতিয়ে দেখা আবশ্যক।
চারটি মানদ-ের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিও ভুক্ত হলে জনসাধারণের মনে কোনো প্রকার অভিযোগ থাকবে না। ফলে কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো উক্ত মানদ- পুরণের চেষ্টা করবে। এতে মানসম্মত শিক্ষার দুয়ার খুলবে এবং প্রকৃত শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে।
চারটি মানদ-ে ২ হাজার ৭শ ৬২টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এতে কোনো উপজেলায় দশ-বারোটি আবার অনেক উপজেলায় একটিও যোগ্যতার মাপকাঠিতে পড়েনি। ফলে স্বভাবতই স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও তালিকা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি আবারও প্রত্যেক উপজেলায় সমভাবে যেন এমপিওভুক্তি হয় সে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এমপিওভুক্তির জন্য অনেক সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। এমপি মহোদয়দের কাছে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান ডিও লেটার প্রার্থনা করলে তিনি সদয় হয়ে দেবেন এটাই সত্য কথা। তবে ডিও লেটারের বদৌলতে কোনো নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তালিকায় জায়গা পেলে তা আদতে তুলনামূলক যোগ্য প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের মাঝে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে অনেক প্রভাবশালী এমপি/মন্ত্রী তাদের প্রভাব খাটাতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে যোগ্য প্রতিষ্ঠান এবং ঐসব প্রতিষ্ঠানের পরিশ্রমী শিক্ষকমন্ডলী উৎসাহ হারাবেন, এতে কোন সন্দেহ নাই। ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানে ফল বির্পযয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ ও সুবিবেচক। তিনি যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওকরণে অনড় আছেন। তবে কিছু উপজেলা এ তালিকায় একেবারেই শূন্য, তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বভাবতই উভয় সংকটে আছেন। কিন্তু এরপরেও তিনি দক্ষ হাতে যোগ্য- মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করে বাকী প্রতিষ্ঠানগলোকে পর্যায়ক্রমে করবেন বলে প্রত্যাশা সকলের। কারণ একই সাথে সাড়ে নয় হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সামর্থের বাইরে না হলেও দেশের সীমিত অর্থনীতিতে তা বেশ কঠিন। বরং প্রতিবছর এমপিও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এটাই সচেতন মহলের প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষক