চলতি বছরের শুরুতে ডাকসু নির্বাচনের হাওয়ায় সোচ্চার হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) প্রত্যাশীরা। চাঙ্গা হতে থাকে ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়ে যায় ক্যাম্পাসে। রুটিন করে দলীয় টেন্টে বসাসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। কিন্তু বছরের প্রায় শেষ দিকে এসে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে সক্রিয় হয়ে ওঠা সেই সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বরে নেতাকর্মীদের দেখা গেলেও রাকসুকেন্দ্রিক বিষয়ে নিষ্ক্রিয় তারা। বছরের শুরুতে রাকসুকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও কয়েক মাস ধরে চোখে পড়ার মতো কোনো কর্মসূচিই নেই।
সংগঠনগুলোর নেতাদের ভাষ্য, উপাচার্য বলেছিলেন শিক্ষার্থীরা চাইলে চলতি বছরই নির্বাচন হবে। কিন্তু তাঁর এই কথা আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেই আশা-জাগানিয়া কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীরা ধরেই নিয়েছে নির্বাচন হতে এখনো ঢের সময় বাকি। তাই কার্যক্রমও চলছে ঢিমেতালে।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনায় বসে রাকসু সংলাপ কমিটি। প্রায় চার মাস ধরে এই কমিটি ক্যাম্পাসের ১২টি রাজনৈতিক ও প্রায় ১০টি সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করে। এরপর ৪ জুলাই হল প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে সংলাপ শেষে এখন চলছে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ। এ পর্যন্ত তিনটি হলের বাসিন্দা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়েছে। বাকি আছে আরও ১৪টি হল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিলও করে সংগঠনটি। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম চোখে না পড়লেও রাকসু সংলাপে অংশ নেয় তারা। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচিও ছিল সংগঠনটির। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে তারা ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি হাতে নেয়, যদিও কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হয়নি শেষ পর্যন্ত।
রাকসু বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে একাধিকবার লিফলেট বিতরণ করে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। এর কিছুদিন পর রাকসু বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে সংগঠনটি। বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বেশ বড় পরিসরে হল সম্মেলনের আয়োজন করে। তারা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন হলে কমিটিও দেয়। এ ছাড়া রাবি ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু গত মাস তিনেকের বেশি হলো রাকসুকেন্দ্রিক কোনো কার্যক্রম নেই তাদের। যেন এ বিষয়ে কোনো ভাবনাই নেই সংগঠনগুলোর।
নেতাকর্মীদের দাবি, নির্বাচনকে বিলম্বিত করতেই ‘সংলাপ কৌশল’ অবলম্বন করেছে প্রশাসন। আর এই কৌশলের প্যাঁচেই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘আমরা যখন তৎপর ছিলাম তখন প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আন্তরিকতা দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন যে আন্তরিক নয়, সেটি এখন পরিষ্কার। আগামী দিনে সাংগঠনিকভাবে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করব।’
রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। তার পর থেকে নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় হবে।’
নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘একটু দেরি তো হবেই। এখনো হলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হয়নি। সংলাপ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাকসুর সাবেক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’