আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের যে ঘোষণা উপাচার্য শুক্রবার দিয়েছেন, আমরা সেটাকে সতর্কতার সঙ্গে দেখতে চাই। শনিবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ' করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এর ফলে ছাত্র রাজনীতি ছাড়াও শিক্ষক ও কর্মচারীদের রাজনৈতিক সংগঠন করার অধিকারও রহিত হয়েছে। ওই ক্যাম্পাসে এর আগেও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছিল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বুয়েট শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার সনি নিহত হওয়ার পর ২০০২ সালে দাবিটির পক্ষে তৈরি হয়েছিল ব্যাপক জনমত। এবার বুয়েট ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে আবরার নিহত হওয়ার জেরে শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধের ঘোষণা এলো। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির ভাষা যেমনই হোক, এর মর্মার্থ ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। রোববার (১৩ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, তারা আসলে 'ছাত্র রাজনীতি' বলতে বর্তমানে সন্ত্রাস কবলিত ছাত্র রাজনীতির কথা বুঝিয়েছেন। খোদ বুয়েটে আমরা দেখেছি, যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে সেখানে সেই দলের ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় শাখা ও বিভিন্ন উপদল আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে। এর জেরেই সনি নিহত হয়েছিলেন। এর জের ধরেই আবরারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ ধরনের চিত্র আমরাও নিশ্চয়ই দেখতে চাই না। কিন্তু এর দায় ছাত্র রাজনীতির নয়, বরং সংগঠন বিশেষের সন্ত্রাসী তৎপরতার। বস্তুত বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশের ছাত্র সমাজের সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমরা মনে করি, আদর্শ ও নৈতিকতার জন্য ছাত্র সমাজের সক্রিয়তা এখনও প্রয়োজনীয়। ছাত্র রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু একই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতিতে ঢুকে পড়া সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজিও আর চলতে পারে না। আমরা ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই চাই, সন্ত্রাস কোনো মাত্রাতেই চাই না। আমরা চাই ছাত্র রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস নিষিদ্ধ হোক। আমরা প্রত্যাশা করব, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরাও নিজেদের অধিকার ও দাবি আদায়ে রাজনৈতিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন এবং পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতির পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবারিত হবে। কিন্তু তার আগে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাস ও উচ্ছৃঙ্খলতা বন্ধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েটের বাইরে এখনও যেসব ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চলমান রয়েছে, সেখানকার শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জন্যও বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত একটি কঠোর বার্তা। সন্ত্রাস পরিহার না করলে সেখানেও এমন নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি কোনো পক্ষের জন্যই কল্যাণকর হবে না। দেশের বৃহত্তর রাজনীতির জন্য তো নয়ই।