উপরে ওঠার বিভিন্ন মাধ্যম আছে। লিফট দিয়ে সহজেই ওপরে ওঠা যায়। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ বেয়ে ওপরে ওঠা বেশ কষ্টকর। তার চেয়ে বেশি কষ্ট বিপজ্জনক ও কঠিন পথে পর্বতচূড়ায় ওঠা। ওপরে ওঠার চেষ্টা ও কৌশল জানতে হবে আগে। রাজনীতি হলো অনেকের কাছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। লাফ দিয়ে যেমন মগডালে ওঠা যায় না, তেমনি হঠাত্ করে রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। উড়ে এসে জুড়ে বসা রাজনীতি দেশের কাজে আসে না। রাজনীতিতে আসার আগে রাজনৈতিক আচরণ শেখার প্রয়োজন আছে। সুখ, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেই রাজনীতি শিখতে হয়। বাঙালি জাতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে বারবার। শত অত্যাচারেও কোনোদিন মাথা নত করেনি। শোষণমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ছিল বঙ্গবন্ধুর। সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। শিক্ষিত, মেধাবী ও সত্ লোক রাজনীতিতে এলে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এজন্য শিক্ষিত, যোগ্য ও দূরদর্শী তরুণদের রাজনীতিতে জায়গা করে দিতে হবে। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চা শুরু করতে হবে। দুর্বল ও অনগ্রসর রাজনীতি সমাজের অধঃপতন আনে। শোষণ ও আধিপত্য বন্ধ করতে পারে না। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। নিজ এলাকায় জনপ্রিয়, দলের জন্য নিবেদিত—এমন যোগ্য, মেধাবী নেতাদের সামনে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। তারা তাদের উদার মানবতা দিয়ে যেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। রাজনীতিতে যেন যথাযথ নেতৃত্বের অভাব না হয়। সুযোগ- সুবিধা নেবার জন্য সবাই ক্ষমতাসীন দলে ভিড় করতে চায়। এজন্য ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিন দিন বাড়ছে। জনমনে বাড়ছে ভয়। দলে হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিহিংসার কোন্দলে অস্বস্তিতে আছে বড়ো দল। দলকে শক্তিশালী করতে সঠিক পথেই চলতে হবে। সংগঠনের অভ্যন্তরে সংঘাত বাধে নানা কারণে। কেউ কেউ আদর্শের সঙ্গে করে বিশ্বাসঘাতকতা। দলের মধ্যেও গ্রুপে গ্রুপে বিভেদ আছে। সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ মেধার চেয়ে টাকার মূল্যায়ন করে বেশি। সুযোগ পেয়ে অদক্ষরা পদ-পদবি পেয়ে জবরদখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চামচামি করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে অনেক টাকার মালিক হয় পাতি নেতারা। তারা বড়ো নেতাদের গুণগান নিয়ে সব সময় অস্থির থাকে। দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন খাত থেকে চাঁদা আদায় করা পাতি নেতাদের কাজ।
প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে দুর্নীতির গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। জনগণ দেশের শক্তি। মনে রাখতে হবে, জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণের মুখ বন্ধ রাখা যায় না। রাজনীতির আদর্শ হবে জনগণের কল্যাণ সাধন করা। রাজনীতিবিদরা মানুষের সেবায় একমনে এগিয়ে আসবে। দুর্দিনে তাদের সততা ও দক্ষতা দিয়ে রাজনীতি টিকিয়ে রাখবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে মেধাবী রাজনীতিবিদরাই। তরুণ মেধাবীদের দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। রাজনীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী তরুণরাই জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
লেখক: জয়নুল আবেদীন স্বপন, গাজীপুর।