নানা-নানীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দুই বাসের পীড়াপীড়িতে প্রাণ হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজেছাত্র রাজীব হোসেন। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই স্বজনরা নানা-নানীর কবরের পাশেই নতুন কবর খুঁড়ে রাখেন। রাজীবের কবরের একটু দূরেই রয়েছে তার মায়ের কবর।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে জোহর নামাজের পর হাইকোর্ট মসজিদে রাজীবের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে রাজীবের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফলের দাসপাড়ায় পৌছান তার স্বজনরা।
বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় বাউফল সদরের পাবলিক মাঠে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজীবের ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহ, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মাসুমুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মাঈনুল হাসনসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জানাজার আগে চিফ হুইপ বলেন, রাজীবের মৃত্যুর ঘটনা গোটা জাতিকে মর্মাহত করেছে। সরকার রাজীবের পাশে ছিলো, ভবিষ্যতেও তার পরিবারের পাশে থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা রাজীবের দুই ভাইকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবো।
দ্বিতীয় নামাজের জানাজা শেষে সকাল ১০টায় দাসপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজার নামাজ পড়ান মাওলানা মো. রুহুল আমিন সিরাজি। রাজীবের তৃতীয় জানাজার নামাজ পড়ান তার ছোট ভাই হাফেজ মো. মেহেদি হাসান এবং মোনাজাত করান আরেক ছোট ভাই মো. আব্দুল্লাহ।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসির একটি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের একটি বাসের পীড়াপীড়িতে দুই বাসের চাপায় পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সরকারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিলো। সোমবার (১৬ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ’র চিকিৎসকরা।
বাউফল উপজেলার বাসিন্দা রাজীব তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালে মাকে এবং অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বাবাকে হারান। এরপর মতিঝিলে খালা জাহানারা বেগমের বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। মহাখালীর তিতুমীর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর যাত্রাবাড়ীতে মেসে ভাড়ায় থেকে পড়াশোনা করছিলেন রাজীব। পাশাপাশি তিনি একটি কম্পিউটারের দোকানেও কাজ করছিলেন। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের খরচও চালাতে হতো রাজীবকে।