তেলাপিয়া মাছ পানির মধ্যে খাঁচায় আটকে রেখে মশার লার্ভা ধ্বংস করার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এই নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাবে আবার ক্ষতিকর এডিস মশার লার্ভা খেয়ে ধ্বংস করবে মাছ। তেমনি একটি ফাঁদ তৈরি করেছেন তিনি।
অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তেলাপিয়া মাছকে খাঁচায় বন্দী রেখে ড্রেনের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়, যাতে তেলাপিয়া মাছকে কোন সাপ, ব্যাঙে না খেয়ে ফেলতে পারে। মাছকে কম খাবার দিতে হয় যাতে মাছ ক্ষুধার্ত অবস্থায় মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে পারে, প্রয়োজন অনুযায়ী এই ফাঁদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সারানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে যুগে যুগে ভয়াবহ রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাবের ঘটনা পৃথিবীতে একাধিকবার ঘটেছে। বাংলাদেশে ইদানীং যে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান, আমার মতে এ দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বা এর হুমকির মুখে পরাটাই তার অন্যতম কারণ। কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে শহরের ড্রেন, ডোবা যখন পানিতে ভরে যেত, তখন সেই পানির ভেতরে ছোটবড় অনেক ধরনের মাছের বিচরণ ছিল লক্ষণীয়।
মশার ডিম ফুটে বেরোনো লার্ভা হচ্ছে ছোট-ছোট মাছের অত্যন্ত প্রিয় একটি মজাদার খাবার। গবেষক আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, তার পর্যবেক্ষণ মতে, নাইলোটিকা জাতীয় মাছ তো মশার লার্ভা পেলে অন্য খাবারের ধারে-কাছেই যেতে চায় না। অন্যদিকে শহরের ড্রেন, ডোবা, কনস্ট্রাকশন সাইটের ইট ভেজানোর চৌবাচ্চা হচ্ছে সকল প্রকার মশার জন্য নিরাপদ এবং উন্নতমানের প্রসব কক্ষের মতো। যেহেতু বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলেছে, কাজেই চৌবাচ্চায় ইট ভেজানোর কাজ বন্ধ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
কীটনাশক দিয়ে চৌবাচ্চার পানি, ড্র্রেনের পানি থেকে মশার ডিমকে ধ্বংস করা যায়, তবে কীটনাশক অতিরিক্তমাত্রায় ব্যবহার করলে ড্রেন, ডোবার মাঝে বেঁচে থাকা পরিবেশ বান্ধব অন্যান্য কীটপতঙ্গ ও ছোটমাছও একইসঙ্গে মারা যাবার সম্ভবনা আছে যা প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রকৃতি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলে আমরা আবার নুতন ধরনের কোন মহামারী রোগে আক্রান্ত হতে পারি। বুদ্ধিমানের কাজ হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ঠিক রেখে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করা।
তিনি আরও বলেন, তার পর্যবেক্ষণ মতে, যেহেতু নাইলোটিকা জাতীয় মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলার খুব চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এই জাতীয় মাছকে এডিস মশাসহ সকল জাতীয় মশার লার্ভা নিধনে শিকারি মাছ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যায়ে একটা প্রকল্পে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।