করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একাডেমিক কার্যক্রম ফেরাতে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। গত ৯ জুলাই থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর সাত দিন গেলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংযুক্তি বাড়েনি। বিভিন্ন অনুষদের হিসেবে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই ক্লাসে অনুপস্থিত রয়েছেন। ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য ছাড়াও মোবাইল নেটওয়ার্ক উচ্চগতি সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকতে পারছেন না বলে তাদের দাবি। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ার পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক মিলছে না। আবার পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক শিক্ষক এখনও ক্লাস শুরু করেননি। তবে উপাচার্য বলছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছেন তারা।
গত ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপাচার্য অনলাইন ক্লাস শুরুর বিষয়ে ঘোষণা দেন। ৮ জুলাই বিভাগের সভাপতিদের সঙ্গে উপাচার্যের ভার্চুয়াল আলোচনায় ৯ জুলাই থেকে ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনলাইন ক্লাস মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক বাবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটই অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়েছে। এখনও সব শিক্ষক ক্লাসে যুক্ত হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। গত এক সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার ছিল অর্ধেক। অনেকের মতে উপস্থিতি অর্ধেকেরও কম। তবে অনুষদ ভেদে উপস্থিতির পার্থক্য রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোতে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। বিজ্ঞান অনুষদে দু-একটি বিভাগে এখনও ক্লাসই শুরু হয়নি। ক্লাস শুরু হওয়া বিভাগগুলোতে উপস্থিতি ৬০ শতাংশের মতো।
আইন অনুষদের দুটি বিভাগের মধ্যে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। সে জন্য চতুর্থ বর্ষ ব্যতীত অন্য বর্ষগুলোতে ক্লাস চলছে। সেখানে উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি। অনুষদের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একই রকম। তবে কৃষি অনুষদ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশের নিচে বলে অনুষদ সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়াও কলা অনুষদে প্রায় ৫০ শতাংশ উপস্থিত থাকলেও জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে পুরোদমে ক্লাসই শুরু হয়নি। ব্যবসায় অনুষদে উপস্থিতি ৪০-৫০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। অনেক শিক্ষকের মতে, সনাতন পদ্ধতির ক্লাসের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনলাইনে ভালো পড়ানো সম্ভব নয়; সে জন্য দরকার আলাদা প্রস্তুতি।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ইন্টারনেট-নির্ভর ক্লাস বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। সে জন্য তারা ক্লাসে ফিরছেন না। নেটওয়ার্ক সমস্যা তো আছেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট কেনার জন্য আর্থিক সহযোগিতাও দাবি করেন অনেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ও রাবি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছি অনলাইন ক্লাসে সবাই যুক্ত হতে পারবে না। সবার পক্ষে এত টাকার ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা সম্ভব নয়। প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরও ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি আমরা। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানও একই কথা বলেছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংযুক্তি যতটা বাড়ানো যায়। আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, এত শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব নয়।