ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রবীন্দ্র ভবন চারতলা থেকে পাঁচতলায় উন্নীত করা হচ্ছে। সংস্কার না করে উল্টো তলা বৃদ্ধি করায় তৈরি হয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ছাদ ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এর পরও থামেনি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তলা বৃদ্ধির কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ছয়তলার ফাউন্ডেশন করা হলেও তা চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। ভবনটিতে সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ১০টি বিভাগের নিয়মিত ও সান্ধ্য কোর্স মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভবনের প্রায় সবকয়টি কক্ষে নিয়মিত ক্লাস চলে। শ্রেণিকক্ষ বাদে অন্য কক্ষগুলো শিক্ষকদের চেম্বার ও ছাত্রীদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোটখাটো ফাটল ও ছাদের কিছু অংশ ড্যামেজড হয়ে যাওয়ায় রবীন্দ্র ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও একাডেমিক মিলিয়ে মোট ১৯টি ভবনকে গত বছর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে সেগুলো সংস্কার সম্ভব হচ্ছে না।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে রবীন্দ্র ভবনের পশ্চিম ব্লকের ছাদে ওঠেন ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শওকত ওমর সজীব। ছাদের উত্তর-পশ্চিম কোণে যেতেই ছাদের কিছু অংশ ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান। এতে তাঁর কোমরের হাড় ও একটি হাত ভেঙে যায়। গুরুতর আহত সজীবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটিতে উত্তর-দক্ষিণে তিনটি ও পূর্ব-পশ্চিমে দুটি করে পাঁচটি ব্লক আছে। এর মধ্যে উত্তর ব্লকের অর্ধেক অংশে ক্লাসরুম নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বাকি অর্ধেকেও কাজ চলছে। দক্ষিণ ব্লকেও কাজ শুরুর প্রক্রিয়াধীন এবং পশ্চিম ব্লকের ছাদটির যেই অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মধ্য ব্লকের ছাদটিতে মোবাইল ফোনের চারটি টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন ভবনটির স্থায়িত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান অনুষদের একাধিক শিক্ষক।
ওই ভবনে ক্লাস করেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে দিনের অনেকটা সময় তাঁদের এই ভবনে থাকতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সংস্কার না করে তলা বাড়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনর রশীদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে। যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বড় ঘটনাও ঘটতে পারত। আমরা শিগগিরই কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
ভবনটির বর্ধিতাংশের কাজটির দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু মুসা। তিনি বলেন, ‘ভবনটির পশ্চিম ব্লকের ছাদটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমরা কাজ করছি উত্তর-দক্ষিণ ব্লকে। সেখানে ঝুঁকি নেই। এ ছাড়া সব কিছু ঠিকঠাক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই আমরা কাজ শুরু করেছি।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদও একই মন্তব্য করেন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।