রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য সাড়ে সাত হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার টাকাই নেয়া হয়েছে বিনা রসিদে। প্রতি বছর এ রকম বিনা রসিদে টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা এই টাকা শিক্ষার্থী, কম্পিউটার ল্যাব, বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে খরচ করে।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে থেকে বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয় এ মাসের ১৫ তারিখে। এ বছর ওই বিভাগে স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। ভর্তির সময় আবাসিক শিক্ষার্থীদের তিন হাজার ১৪০ টাকা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তিন হাজার ১২০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। কিন্তু বিভাগ থেকে ভর্তি ফরম নেয়ার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিনা রসিদে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, বিভাগের উন্নয়ন কিংবা যে কারণেই নেয়া হোক না কেন, রসিদের মাধ্যমে খাত দেখিয়ে টাকা নিলে বিষয়টি স্বচ্ছ হতো। তবে রসিদবিহীন টাকা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অবহিত রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা চাইলে আগামীতে রসিদ দেয়া হবে বলে জানান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই টাকা না নিলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস, বিভাগের উন্নয়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তি ফরম নিতে বিনা রসিদে সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়েছি। শুধু এ বছরই নয়, প্রতি বছরই এভাবে টাকা নেয়া হয়। আবার স্নাতক পর্যায়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময়ও প্রত্যেক বর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে বিনা রসিদে টাকা নেয়া হয়।’ পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে গত বছরেও এভাবে টাকা নেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক রেজাউর রহমান বলেন, ‘যে টাকা নেয়া হয়, তা শিক্ষার্থীদের এবং বিভাগের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেয়া টাকায় কিছুই হয় না।’ ফরম ফিলাপের সময় বিনা রসিদে নেয়া টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চার বছরের কোর্স হওয়ায় প্রথম থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত অল্প অল্প করে বিভাগ উন্নয়ন ফি হিসেবে ওই টাকা নেয়া হয়।’
একই চিত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগেও : ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের মতো একই চিত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগেও। বিভাগটি মাস্টার্সে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছয়শ টাকা করে নিয়েছে। জানা গেছে, গত জুনের প্রথম সপ্তাহে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে শেষ হয়। বিভাগটিতে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীসংখ্যা ১১০ জনের কিছু বেশি। শিক্ষার্থীরা জানান, এই টাকার জন্য কোনো রসিদ দেয়া হয়নি। তাই টাকা ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে জানেন না তাঁরা।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এস এম এক্সাম উল্যাহ বলেন, ‘টাকা জমার সমস্ত তথ্য বিভাগে জমা থাকে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো রসিদ বই দেয় না। তাই আমরাও রসিদ দিই না।’
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ‘টাকা যে কারণেই নেয়া হোক, অবশ্যই রসিদ দিতে হবে।’