রিফাত হত্যা : ১ বছরেও খোলেনি রহস্যের জট - দৈনিকশিক্ষা

রিফাত হত্যা : ১ বছরেও খোলেনি রহস্যের জট

বরগুনা প্রতিনিধি |

বছর পার হলেও বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত হত্যার রহস্যের জট এখনও খোলেনি। আজ শুক্রবার (২৬ জুন) রিফাত হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো। এই দিনে বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই নির্মমভাবে হত্যার পর থেকে দুর্বিষহ দিন কাটছে রিফাতের পরিবারের। হত্যাকারীদের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন তারা।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, করোনার ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠলেই শেষ হবে বিচার। এ হত্যার সময় ওঠা মাদকসহ, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, যোগসাজশ নিয়ে ওঠা অভিযোগসহ রিফাতকে হত্যার কারণের জট খোলেনি এখনও।

জানা যায়, ফেসবুকভিত্তিক বন্ড ০০৭ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে শাহনেওয়াজ রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হত্যাকারীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের ০০৭ নামের সঙ্গে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান ছিলেন নয়ন বন্ড এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরায়েজী গ্রুপটি পরিচালনা করতেন।

বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাতকে। এ ঘটনায় ২৭ জুন ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।

আসামিরা যখন এক এক করে গ্রেফতার হচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তে ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।

ঘটনা নতুন মোড় নেয় ১৬ জুলাই। এই দিন সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে রাতে রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন মিন্নি।

১ সেপ্টেম্বর মিন্নিকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করে দুইভাগে বিভক্ত মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালত ও শিশু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

দায়রা ও জজ আদালতে ৭৬ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। শিশু আদালতে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল কেটে গেলে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

এ মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে সাতজন জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগার ও যশোর শিশু কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুসা এখনো পলাতক রয়েছে।

এ বিষয়ে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর পরে আমাদের পরিবারের সদস্যদের দিনগুলো খুবই দুর্বিষহ কেটেছে। একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন কীভাবে আমরা দিনগুলো পার করেছি। সরকারের প্রতি আমার আকুল আবেদন, যাতে এই মামলাটির বিচারকার্য শেষ করে দ্রুত রায় দেয়া হয়। আমি নিজেই হৃদরোগাক্রান্ত, আমি যেন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে, কিন্তু আমার পাশে আমি কাউকে পাইনি। দেশে এত দাতা সংস্থা, এত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে, কিন্তু তারা কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি।

মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সারাদেশের মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে রিফাতকে বাঁচাতে অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কীভাবে লড়েছেন। মামলার বিচারকার্য শেষ হলে আমার মেয়ে নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাবে।

শিশু আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিশু আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্যতীত সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আদালত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুরু হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিচারকার্য শেষ হবে।

বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে ৭৬ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু না হলে এত দিনে হয়ত মামলাটিতে বিজ্ঞ আদালত রায় দিতেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করেছি।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006119966506958