আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মোতাহার হোসেনকে। এই চক্রের কমপক্ষে তিনজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোতাহার ও অপর দুইজনের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়েছিল কিন্তু আদালত মাত্র তিনদিনের রিমান্ডের অনুমোদন দিয়েছে মোতাহারকে। অপর দুইজনকে সাতদিন করে। রিমান্ডের বিষয়টি শুক্রবার মোতাহারের পক্ষের আইনজীবী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু মোতাহারের গ্রেফতার ও রিমান্ডে থাকার তথ্য গোপন করে তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে শিক্ষা ভবনে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা। মোতাহার নিখোঁজ বলে তারা ফেসবুকে প্রচার করছেন। ঢাকা ও নরসিংদীর পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথিত যোগাযোগ ও তার ফিরিস্ত লিখছেন ফেসবুকে। বাস্তবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মোতাহার গ্রেফতার এবং পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।
জানা যায়, মোতাহার হোসেনের চক্রের অপর দুই সদস্যের একজন তার সাবেক ছাত্র, অপরজন এখনও ছাত্র এবং শিবিরের নেতা। মোতাহার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির শাখার নেতা ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কুখ্যাত মন্মথ বাড়ৈ ও শিবির সিন্ডিকেটের সদস্য। গত দশ বছরে অঢেল টাকার মালিক হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে বাড়ৈ। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় থাকায় তার ছুটি, আবেদন ইত্যাদি তথ্য গোপন করে চলছে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় কর্মরত শিবিরপন্থী কর্মকর্তাদের সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডার যাবতীয় রসদ সরবরাহকারীদের অন্যতম মোতাহার। তার সঙ্গে শিক্ষা অধিদপ্তরের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের দুইজন ও মাদরাসা শাখার দুইজন, পরিকল্পনা শাখার একজন এবং প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আরো যোগাযোগ রয়েছে ব্যানবেইসে কর্মরত একজন বিতর্কিত নারী উপপরিচালকের। শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিকাংশই গত বছরের মার্চ মাসে শিক্ষা অধিদপ্তরে বদলি হয়ে এসেছেন।
জানা যায়, বাড়ৈ সিন্ডিকেটের অন্যতম উপদেষ্টা ও অপারেশন প্রধানদের সঙ্গেও মোতাহারের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। যেকোনও বিপদে তারা মোতাহারদের পক্ষে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার চালায়। কখনো জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় আসলে যেন বাড়ৈ সিন্ডিকেট অক্ষত থাকে সেই চিন্তা থেকেই মোতাহারদের শেল্টার দেয় বাড়ৈ সিন্ডিকেট। যেমন বিএন-জামাত জমানায় শিশির সিন্ডিকেটের প্রধান কাজী কাইয়ুম শিশির মহা প্রতাপে অফিসার্স ক্লাবে ঘুরে বেড়ান গত ১১ বছর ধরে। অথচ তার পদায়ন সরকারি পটুয়াখালী মহিলা কলেজে। এমন সমঝোতায় শিক্ষা প্রশাসনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। যার দায়ভার নিতে হচ্ছে পেশার সৎ, নিরপেক্ষ, সিনিয়র ও ত্যাগী কর্মকর্তাদের।
জানা যায়, অধিদপ্তরের শারীরিক শিক্ষা বিভাগরে একজন কর্মকর্তা বিএনপি নেতা ও অগ্নি সংযোগ মামলায় গ্রেফতার ও জেল খাটা অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভূইয়ার আত্মীয়। শারীরিক শিক্ষার ওই কর্মকর্তা পুরো বিএনপি আমল এমনকি ২০০৯ সালের মে মাস (যতদিন সেলিম ভুইয়াা ওইপদে ছিলেন) পর্যন্ত ছিলেন।
মোতাহারের সহকর্মীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, গত সপ্তাহে গাজিপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়রেন চুপাইল গ্রাম থেকে রাত অনুমান ১টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মোতাহার ৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ডায়েরি নং ৬২৯।
মোতাহারের পক্ষে শিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখেছেন। কে কে করেছেন তার ফিরিস্তিও রয়েছে। মোতাহারকে তার পরিবারে কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। অথচ মামলায় গ্রেপ্তার মোতাহার। এই তথ্যটি ফেসবুক গ্রুপের কোথাও নেই। তথ্যটি চাপা রেখে মোতাহারের মুক্তি ও খোঁজ চাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক একজন মহাপরিচালক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের মুষ্টিমেয় কিছু লোক সব আমলেই ভালো পদায়নে থাকার ধান্দায় ক্যাডারের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করছে। তারা এমন সব কাজ করছেন যাতে ক্যাডারটি বিলীন হয়ে যায়। আবার শিক্ষা সার্ভিসে চলে যায়। অপকর্মগুলো করার সময় শুধু নিজের ধান্দায় করেন, কিন্তু ধরা পড়ার পর, পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেটাকে গোটা ক্যাডারের মর্যাদার বিষয় চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।’
শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত হলে দায়ী থাকবে এই মুষ্টিমেয় কিছু লোক যারা আসলে পুলিশ ও কাস্টমস ক্যাডার হতে চেয়েও পারেনননি নিম্নমেধার কারণে তারাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চান। আর অন্য ক্যাডারের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত করেছে শিক্ষা ক্যাডারকে।
তিনি বলেন, মোতাহার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এটা ক্যাডারের প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু কারো ফেসবুকে এই তথ্যটি নেই। অথচ গত সাতদিন ধরে মোতাহারের পক্ষে কত কথাই না লিখলেন তারা। সন্ত্রাসে নিযুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশী এ্যাকশনে গেলে যারা ফেসবুকে উল্টোপাল্টা লেখে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সরকারি কর্মচারী আইনে মামলা হওয়া উচিত। তাহলে সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় ফেসবুকে দুইকথা লেখার কুঅভ্যাস বদলাতে বাধ্য হবে।