রুয়েটে সব হলে টর্চার সেল - দৈনিকশিক্ষা

ইবিতে টর্চার আছে, সেল নেইরুয়েটে সব হলে টর্চার সেল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ছয়টি আবাসিক হলে টর্চার সেল রয়েছে। হলের কয়েকটি কক্ষ দখল করে পলিটিক্যাল ব্লক বানিয়ে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। এক সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও (ইবি) টর্চার সেল ছিল। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ নিয়ে লেখালেখির পর সেখানে এখন ‘টর্চার সেল’ নেই। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টর্চার থেমে নেই। অভিযোগ- ‘শিবির’ সন্দেহে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যত্র নিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্যাতন করে।

যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সেটির ছাত্র সংগঠন টর্চার সেল বানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর কর্তৃত্ব খাটায়, চাঁদাবাজি করে। এ সম্পর্কে ইবি প্রতিনিধি সরকার মাসুম ও রাজশাহী ব্যুরোর পাঠানো প্রতিবেদন-

রাজশাহী : রুয়েটের ছয়টি আবাসিক হলের প্রতিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পলিটিক্যাল ব্লক বানিয়ে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। এসব ব্লক ছাত্রলীগের একেকটি ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘শিবির’ সন্দেহে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়।

পূর্বশত্রুতা বা চাঁদাবাজির জন্যও শিক্ষার্থী ও দলীয় কর্মীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। ‘শিবির’ বা ‘মাদক ব্যবসায়ী’ বলে পুলিশে দেয়া হয়। অবশ্য সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পেয়ে পরবর্তী সময় তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

শিবির ধরার ক্রেডিট ও চাঁদাবাজি করার উদ্দেশ্যে টর্চার সেল তৈরি করা হয়। রুয়েটের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলকে টর্চার সেলের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে হলগুলো জিম্মি। সিট বাণিজ্য করে তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীকে হলে নিয়ে মারধর করা হয়। নেতাদের নির্দেশনা না মানলে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে চলে মারধর। গত বছর পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বছর শিবির সন্দেহে মারধরের অভিযোগ নেই।

তবে চাঁদার দাবিতে জিম্মি ও মারধর করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কেউ ভয়ে মুখ খোলেন না। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দাপটে অসহায় প্রশাসনও। এসব ঘটনায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

ছাত্রলীগের কাছে অসহায় হলের প্রাধ্যক্ষরা। সম্প্রতি বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার পর আবাসিক হলে টর্চার সেলের বিষয়টি সামনে আসে।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট পূর্বশত্রুতার জের ধরে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক নির্ঝর আহমেদকে মারধর করে দলীয় কর্মীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম হীরা সেখানে গেলে তাকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।

একই বছর ২৫ অক্টোবর শিক্ষার্থী সাইফকে ‘শিবির’ সন্দেহে মারধর করে পুলিশে দেয় রুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে ১২ এপ্রিল রুয়েটের আবাসিক হল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র শহিদুল ইসলামকে শিবির সন্দেহে আটক ও মারধর করে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, নিজেদের জাহির করতে মাঝে মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে এনে মারধর করা হয়। তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে শিবির তকমা দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে রুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি নাইমুর রহমান নিবিড় বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে মারধর করা হয় না। বরং শিক্ষার্থীকে কেউ মারধর করলে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

শুধু চিহ্নিত শিবির নেতাকর্মীদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আওয়াল বলেন, ঘটনা ঘটার পর শুনতে পাই। তবে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের টর্চার সেল নিয়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর যুগান্তরের শেষ পাতায় ‘ইবি হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে অভিযুক্তরা পারিবারিক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তিরস্কারের শিকার হন।

এরপর থেকে টর্চার সেলের বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগ কঠোর অবস্থান নেয়। চিহ্নিত কক্ষগুলোতে এখন আর শিক্ষার্থীদের ডাকা হয় না। মারধর করা হয় না। তবে টর্চার সেল না থাকলেও টর্চার থেমে নেই।

কয়েকজন দলীয় কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতাদের নির্দেশে কক্ষে ডেকে নিয়ে টর্চার করা হতো। তবে এখন অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।

অনেক সময় নেতাদের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও স্বপ্রণোদিত হয়ে অতি উৎসাহী ক্যাডাররা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অমানুষিক নির্যাতন করে। অভিযোগ- শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক নেতা সিগারেট কেনার টাকা নেন।

ভুক্তভোগীরা বিষয়টি প্রতিবেদককে জানালেও নাম প্রকাশ করতে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন।

হলে হলে র‌্যাগিং ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দলে ভেড়াতে, নিজ বিভাগে প্রভাব বিস্তার করতে এবং গ্রুপ ভারি করতে তাদের অপেক্ষাকৃত সিনিয়ররা অমানুষিক নির্যাতন করছেন।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগ, ২০ ফেব্রুয়ারি সমাজকর্ম বিভাগ এবং ১৩ মার্চ ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ২১৩নং কক্ষটি এক সময় ছাত্রলীগের টর্চার সেল নামে পরিচিত ছিল। তবে দীর্ঘদিন সেখান থেকে কোনো নেতিবাচক খবর শোনা যায়নি।

একই সঙ্গে একই হলের সাধারণ শিক্ষার্থী ও জুনিয়রদের কাছে ৪১৯নং কক্ষটি ডেঞ্জার রুম নামে পরিচিত ছিল। সেখানকার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। টর্চার সেলের তালিকায় আরও ছিল শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২০৮ ও ২২৬নং কক্ষ। হলের ছাদে নিয়েও টর্চার করা হতো।

অভিযোগ- ছাত্রলীগ এককভাবে হল দখলের আগে শিক্ষার্থীরা শিবির-ছাত্রদলের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতো। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দ্বারা টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী হল ছাড়তে বাধ্য হন।

তবে এখন এসব টর্চার সেলের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিচ্ছিন্নভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টর্চার করার খবর শুনেছি।

ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের ব্যানারে কোনো ধরনের অপকর্ম করার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, হলে টর্চার সেলের অস্তিত্ব থাকবে না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে। কোনো রাজনৈতিক কাঠামো দিয়ে তাদের বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003648042678833