করোনার ছোবলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শীঘ্রই রেডিওতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচারে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার ও মোবাইল ফোনের বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর-৩৩৩৬ এ শিক্ষকের পরামর্শ কার্যক্রম গ্রহণের পর এবার রেডিওতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচার শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতার ছাড়াও দেশের সকল এফএম রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার হবে ক্লাস। ইউনেস্কোর অর্থায়নে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস সম্প্রচারের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। শনিবার (৬ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সঙ্কটের কারণে সহসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না; এমন চিন্তা থেকেই শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। পরীক্ষাও যেহেতু নেয়া যাচ্ছে না তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সঙ্গে যে কোনভাবে যুক্ত রাখার চিন্তা থেকেই একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ শুক্রবার তাদের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সংসদ টেলিভিশনের এবার রেডিওতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচার শুরু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারব। সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস সম্প্রচারের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে ইউনেস্কো। তাই শিক্ষার্থীদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে রেডিওতে ক্লাস সম্প্রচারে অর্থায়ন করবে সংস্থাটি।
মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং এটুআই সমন্বয় করে রেডিওতে প্রচারের কন্টেন্ট তৈরি করবে। যেগুলো বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হবে। বেসরকারী এফএম রেডিওতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রচারের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, খুব সহজে স্মার্টফোনের মাধ্যমে রেডিও শোনা যায়। তাই এ উদ্যোগের ফলে তৃণমূলের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আমরা রেডিওতে ক্লাস প্রচারের কাজ অনেকখানি গুছিয়ে এনেছি। আগামী ১০ জুন নাগাদ এ বিষয়ে একটা ঘোষণা আমরা দিতে পারব বলে আশা করি।
মহাপরিচালক বলেন, রেডিওতে ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি, তবে এতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টেলিভিশনে চিত্র দেখিয়ে শিশুদের বোঝানো যায়। রেডিওতে কোন কিছু না দেখিয়ে, কেবল শুনিয়ে নির্দিষ্ট পড়াটা কীভাবে শিশুকে বোঝানো যাবে, তা নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি।
বাড়িতে বাড়িতে প্রশ্ন পাঠিয়ে শিশুদের পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ সম্পর্কে মহাপরিচালক বলেন, আসলে প্রাণঘাতী এ করোনার মধ্যে ওভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। একটি পরীক্ষা নিতে গেলে আবার বাধ্যতামূলক করার বিষয় আসে। এমনিতেই অনেক শিক্ষক শিশুদের পরীক্ষার মধ্যে রেখেছেন। অনেকেই সেই কাজ করছেন। একটা পরীক্ষা নেয়া, মূল্যায়ন করা আসলে ঠিকভাবে এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। তবে, যেহেতু অনেক শিক্ষকই কাজ করছেন। আমরাও বিভিন্নভাবে ক্লাস সম্প্রচার করছি। হেল্প লাইনেও শিশুরা সাড়া দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল সংসদ টেলিভিশনে শুরু হয়েছে প্রাথমিক স্তরের ক্লাস সম্প্রচার। সংসদ বাংলাদেশ টিভির মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত রেকর্ড করে ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে এ কার্যক্রম চলছে। যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।