করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রেমডেসিভির ব্যবহার না করাসহ এই পরামর্শ এমন এক সময় এলো যখন বাংলাদেশের বেশকিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ওষুধটি উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ট্রায়ালে সফলতা আসায় প্ল্যাজমা থেরাপিও বিভিন্ন হাসপাতালে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় কোন ধরনের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটির প্রকাশিত করোনা গাইডলাইনে বলেছে, তাদের আগের গাইডলাইনে পরিবর্তন আনা হয়নি। পূর্ববর্তী এবং অন্য আন্তর্জাতিক মানসম্মত গাইডলাইনের সঙ্গে সমন্বয় করে গাইডলাইনগুলো তৈরি করা হয়েছে। রেমডেসিভির এবং অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ব্যাপারে ডব্লিউএইচও বলেছে, কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যমান গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। করোনার চিকিৎসায় এসব ওষুধের কোনটিরই উচ্চমানের ইতিবাচক ফল পাওয়ার প্রমাণ মেলেনি। এমনকি এসব ওষুধের জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এর আগে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থাটি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেয়। সংস্থাটি বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ মানুষের শরীরে মৃদু এবং ৪০ শতাংশের মাঝারি উপসর্গ দিয়ে রোগটির শুরু হয়। এছাড়া ১৫ শতাংশের গুরুতর আকার ধারণ করে; যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। অন্য ৫ শতাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়; যারা আগে থেকে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত।
গতবছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রথম উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর এই ভাইরাস বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে প্রাণ কেড়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি এবং আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫৯ লাখ ৭১ হাজার। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপের দেড়শ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক কিংবা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব ভ্যাকসিনের মধ্যে অন্তত ৬টি প্রথম ধাপের ট্রায়াল সফল হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের চূড়ান্ত ভ্যাকসিন পেতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এমনকি কোভিড-১৯ এর কোন ভ্যাকসিন কখনও নাও পাওয়া যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রামে প্লাজমা দিয়েও বাঁচানো গেল না বৃদ্ধকে
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন চন্দন দত্ত (৬৩) নামের এক বৃদ্ধকে প্লাজমা দিয়ে বাঁচানো যায়নি। করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়া চন্দন দত্ত (৬৩) নগরীর উত্তর কাট্টলীর এলাকার বাসিন্দা। গতকাল সকাল ১১টার দিকে আইসিইউতে তার মত্যু হয়। এর আগে গত শুক্রবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্লাজমা দেয়া হয়েছিল তাকে। করোনায় মৃত চন্দন দত্তের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত এক বৃদ্ধ সকাল ১১টার দিকে আইসিইউতে মারা গেছেন। তাকে শুক্রবার হাসপাতালে প্লাজমা দেয়া হয়েছিল। গত ২৪ মে হাসপাতালের আইসিউতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।