রেলের জমিতে কলেজ, পাশেই ৩০০ খুপরির কলোনি - Dainikshiksha

রেলের জমিতে কলেজ, পাশেই ৩০০ খুপরির কলোনি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের জায়গাটি একেবারে রেললাইনের পাশ ঘেঁষে। জায়গার পরিমাণ তিন একর। এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে এটা রেলওয়ের জায়গা বলেই জানে, কিন্তু বছর পাঁচেক আগে সেখানে ‘উত্তরা পাবলিক কলেজ’ সাইনবোর্ড পড়ে। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর একটি টিনের ঘর তুলে চালু করা হয় কলেজ। কলেজকে একপাশে রেখে বাকি জায়গায় ৩০০ খুপরি তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে বসবাসের জন্য! বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন লায়েকুজ্জামান।

এই ‘কলেজ কাম আবাসিক কলোনি’র প্রতিষ্ঠাতা জনশক্তি রপ্তানিকারক এ এইচ এম সেলিম। তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ করেছেন তাঁর স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের হুঁশ হলে ওই জায়গায় গেড়ে বসা এ এইচ এম সেলিমকে উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল, কিন্তু তার আগেই সেলিম আদালতে মামলা ঠুকে দেন। আদালত উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। গত ৩১ জুলাই উচ্ছেদ অভিযানে এসে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কথা শুনে ফিরে যান ম্যাজিস্ট্রেট।

আদম আলী মার্কেট রেলওয়ে গেট নামে পরিচিত রেলওয়ের ওই জায়গা উত্তরা পূর্ব থানার পূর্ব শেষ সীমানায়। উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টর রেলওয়ে গেট হিসেবে চেনে অনেকে। সেলিম ওই জায়গায় একটি পাকা ইমারতও নির্মাণ করেছেন। আরেকটি ভবনের নির্মাণকাজও চলছে, দোতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ভাড়া দেয়া ঘরের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আলীমুদ্দিন নামে সেলিম সাহেবের একজন ম্যানেজার আছেন এখানে। তিনি ভাড়া সংগ্রহ করেন। ঘর খালি হলে নতুন ভাড়াটিয়াকে ঘরে ভাড়া দেন। ঘরের সাইজ সাত হাত বাই পাঁচ হাত মাত্র। অগ্রিম দিতে হয় দুই মাসের। আমিও দিয়েছি।’ তিনি ভাড়া জানালেন তিন হাজার টাকা।

গত ১০ জুলাই মোবাইল ফোনে আলীমুদ্দিনের কাছে ভাড়ার জন্য ঘর খালি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ আমি ময়মনসিংহ এসেছি, কাল ঢাকায় আসব, যোগাযোগ করবেন।’ জানতে চাইলেন কত টাকার ভেতরে ঘর ভাড়া নেবেন? পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা ঘর নিলে ভাড়া বেশি। পানি, বিদ্যুৎ ও গাস ছাড়াও কিছু ঘর আছে।

আলীমুদ্দিন নিজের পরিচয় দিলেন এ এইচ এম সেলিমের ম্যানেজার হিসেবে। বললেন, ‘ঘরভাড়ার বিষয়াদি আমিই দেখি।’ জানতে চাইলাম ঘরগুলো কি রেলওয়ের জায়গায়? তখন ধমকের সুরে তিনি বললেন, ‘তা দিয়ে আপনার কাজ কী? আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর লইয়েন না। ভাড়ার দরকার ভাড়া নেবেন। আর শুনেন, আমাদের মালিক সেলিম সাব অনেক ক্ষমতাবান, রেলওয়ের হলেই কী? কে আসবে সেলিম সাবের সামনে?’

পরের দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লম্বায় সাত, প্রস্থে পাঁচ হাত করে প্রতিটি কক্ষ। টিনের ঘর, পাকা দেয়াল দেয়া ঘরও আছে। ৩০০ কক্ষ, গড়ে প্রতিটি কক্ষের মাসিক ভাড়া তিন হাজার টাকা। সে হিসাবে সেলিমের মাসিক আয় ৯ লাখ টাকা। ঘর ভাড়া দেয়া এবং ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন আলীমুদ্দিন। তিনি ওই টাকা জমা দেন সেলিমের কাছে। জানা যায়, কলেজের আড়ালেই চলছে এই ঘরভাড়া। কলেজটিতে ছাত্র-ছাত্রীও আছে কিছু।

দেখা যায়, বেশ কিছু ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চলছে। বৈদ্যুতিক বাল্বও জ্বলছে। গ্যাসের চুলায় রান্না হচ্ছে। এলাকার ৩০০ ঘরেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ আছে।’ রেলওয়ের জায়গায় কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ এলো? একজন নারী ভাড়াটিয়া এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন, মালিক গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছেন। সে জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দেই। আসল  ভাড়া দুই হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা।’ ওই নারী ভাড়াটিয়া জানান, প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ম্যানেজার এসে ভাড়া নিয়ে যান। ভাড়ার কোনো রসিদ দেন না, ম্যানেজার একটি খাতায় নাম লিখে নেন।

ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে ম্যানেজার আলীমুদ্দিনকে পাওয়া গেল। সাংবাদিক পরিচয় জেনে একটু নরম সুরেই এদিন কথাবার্তা বললেন। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে গেটের দুই পাশেই আমাদের ঘর আছে। এখানে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কোনো সমস্যা নেই।’ রেলওয়ের জায়গায় এগুলোর সংযোগ পেলেন কী করে? জবাবে বলেন, ‘আমাদের স্যার সেলিম সাহেব অনেক ক্ষমতাবান। সমস্যা নেই। আমাদের এখানে ঘরভাড়া তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।’ সরকারের জায়গায় ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন কীভাবে? জবাবে আলীমুদ্দিন বলেন, ‘আমি তো কর্মচারী, মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি, ভাড়ার টাকা সংগ্রহ করে সেলিম সাহেবকে দিই। আমি জানি সব সেলিম সাহেবের জায়গা।’

এ নিয়ে কথা বললে এ এইচ এম সেলিম বলেন, ‘এখানে মোট জায়গা ৩ দশমিক ৩৩ একর। এর মধ্যে রেলওয়ে ১ দশমিক ১ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেনি। অধিগ্রহণ না করার জায়গার মধ্য থেকে কিছু জায়গা আমি কিনেছি। এখানে কিছু জায়গা আছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা আমাকে কিছু জায়গা লিজ দিয়েছে।’ তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, ‘এখন রেলওয়ে সব জায়গা তাদের দাবি করছে। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালত মামলার ফসয়ালা না হওয়া পর্যন্ত ইনজাকশন জারি করেছে।’

‘আপনি তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার আড়ালে আসলে ঘর ভাড়া দিয়ে আয় করছেন। আপনার দাবিকৃত জমি ছাড়া রেলওয়ের জায়গাও দখলে নিয়ে ঘর ভাড়া দিয়েছেন’, এ কথা বলা হলে সেলিম বলেন, ‘আমি দাবিকৃত জায়গার মধ্যেই আছি, রেলওয়ের জায়গা দখল করিনি এবং ঘর তুলে কাউকে ভাড়া দিইনি। ওই সব ঘরে কলেজের স্টাফরা থাকে।’ ‘ভাড়াটিয়ারা বলছেন, আপনার ম্যানেজার আলীমুদ্দিন তাদের কাছ থেকে ভাড়া তুলে আপনাকে দেয়’—এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটা ঠিক নয়।’

‘রেলওয়ের জায়গায় কীভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেসকোর উত্তরা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমি জানি না এটা আবাসিক মিটার, না বাণিজ্যিক মিটার। বাণিজ্যিক মিটার হলে তিনি একাধিক ঘরে সংযোগ দিতে পারবেন। আমি খোঁজ নিয়ে জানব, ব্যবস্থা নেব।’

সরকারি জায়গায় গ্যাসের সংযোগ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, ‘বৈধ হোল্ডিং ছাড়া গ্যাসের সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। সংযোগ অবৈধ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘অনেকেই মামলা করে টিকে থাকতে চাচ্ছেন, দখল ছাড়তে চান না। আদালতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে, আমরা চাইব দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে এবং আমরা জায়গা দখলমুক্ত করব।’

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044848918914795