এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রতি বিষয়ে ১০ লাখ সেট বই মুদ্রণ ও বাজারজাতের কার্যাদেশ দিয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৭ লাখ সেট বই কম ছাপা হবে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, ১৭ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করলেও কত শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তার হিসাব আমরা জানি না। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই আমাদের দরপত্র আহ্বান করতে হয়। তিনি বলেন, অনেকে বই কেনে না। বড় ভাইয়ের বই ছোট ভাই পড়ে। এ কারণে বই বিক্রি হয় না। তাই কম বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বই কম ছাপা হবে না। এই ৭ লাখ বই ছাপা হবে হিসাবের বাইরে। কারণ প্রতিটি বই ছাপার জন্য ১১ শতাংশ রয়্যালটি জমা দিতে হয় সরকারি কোষাগারে। এই রয়্যালটি ফাঁকি দিতেই প্রয়োজনের চেয়ে কম বই ছাপা হচ্ছে এমন হিসাব তৈরি করে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুন) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বইয়ের সংখ্যা কম দেখানোর কারণে সরকার প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের হিসাব। তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিকে ৩০টির বেশি পাঠ্য আছে। এর মধ্যে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক বাংলা, বাংলা সহপাঠ ও ইংরেজি বই মুদ্রণ ও প্রকাশ হয় এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে। বইয়ের দাম নির্ধারণ করে দেয় এনসিটিবি। এর ১১ শতাংশ রয়্যালিটি দিতে হয় সরকারকে। প্রতিবছরই কম বই ছাপার কার্যাদেশ নিয়ে রয়্যালটি ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ আছে প্রেস মালিকদের বিরুদ্ধে। রয়্যালটি ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য অভিযোগ রয়েছে এনসিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।
যথাসময়ে বই পাওয়া নিয়েও শঙ্কা : আগামী ১ জুলাই থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ক্লাস শুরু হবে। এর আগেই সারা দেশের বইয়ের লাইব্রেরিতে উচ্চ মাধ্যমিকের বই পৌঁছে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান এবারের বই ছাপার কাজ পেয়েছে তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিও। সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে যথাসময়ে বই সারা দেশের লাইব্রেরিতে পৌঁছে দেওয়া কঠিন হবে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানটির ছাপার মেশিনের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গত কয়েক বছর ধরে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সদস্যভুক্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিকের বই মুদ্রণ ও বাজারজাত করে আসছে। এবার উচ্চ মাধ্যমিকের বই মুদ্রণ ও বাজারজাত করার কাজ পেয়েছে ‘অগ্রণী প্রিন্টার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারকে রয়্যালটি, সিকিউরিটিসহ অন্যান্য খাতের জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিতে হবে অগ্রণী প্রিন্টার্সকে।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশে বই বাজারজাত করার সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এদের কাজ দিয়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে এনসিটিবিকে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাওসার উজ্জামান বলেছেন, সব শিক্ষার্থীর হাতে ১ জুলাইয়ের আগেই বই পৌঁছাতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না।