দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষত সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিভুক্ত কলেজে র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। র্যাগিংয়ে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জরুরি সাহায্য ও দ্রুত প্রতিকার দিতে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, র্যাগিং বন্ধে আদালতের এ নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, আদালতের উল্লেখিত নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হলে র্যাগিং নামে অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পারবে দেশের শিক্ষার্থীরা। তবে সমাজের অন্যান্য অসঙ্গতি বন্ধে আদালতের নির্দেশনাকে যেভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে বা হচ্ছে তাতে উল্লেখিত নির্দেশনাটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েই আমরা সন্দিহান।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে আদালত যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন তার কোনটারই বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশ দূষণ, বায়ুদূষণ, জলাশয়ভরাট কিংবা পাহাড় কাটা বন্ধে আদালতের একটি নির্দেশনাও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়নি। কাজেই র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটিও যে ফাইলচাপা পড়বে না সেটা জোর দিয়ে বলার সুযোগ নেই।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরনো ছাত্রছাত্রীরা নবাগতদের সঙ্গে মজা করার অজুহাতে র্যাগিং নামের পৈশাচিক আচরণ করছে, যা সভ্য কোন দেশে কল্পনাও করা যায় না। বড় ভাইয়েরা চড়-থাপ্পড় মারে, স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায়, গণরুমে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে। এতে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের ভীষণ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। এর ফলে কেউ কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কেউ আবার অপমানে আত্মহত্যার চিন্তা-ভাবনাও করতে থাকে। গত বছরে ৬ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে র্যাগিংয়ের নামে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরার হত্যাকা-ের ঘটনায় দেশের মানুষকে ভয়ঙ্করভাবে নাড়া দিয়েছে, উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশের সেরা মেধাবী সন্তানরা লেখাপড়া করতে আসে সেখানে এ রকম অসুস্থ, ভয়ঙ্কর পরিবেশ দেশের মানুষ বুঝতেই পারেনি।
র্যাগিংয়ের নামে চলতে থাকা বর্বরতা অসভ্যতা আমরা চাই না। আমরা চাই না, র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটিও আদালতের অন্যান্য নির্দেশনার মতো অকার্যকর হিসেবে পরিগণিত হোক। বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নীতিমালা তৈরি, র্যাগিংবিরোধী কমিটি গঠন ও তদারকির জন্য অ্যান্টির্যাগিং স্কোয়াড গঠন ও এ কাজে সার্বক্ষণিক একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করা উচিত। র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতিকে সমূলে উৎপাটন করতে হলে সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এ অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসা সব শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার অনুশীলন দরকার। ছাত্র-শিক্ষকের কর্তব্য, মানবিকতা পরিপন্থি রীতিনীতিগুলোকে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বর্জন করা। হিংসা-বিবাদ পরিহার করে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে সমাজ গড়তে ভূমিকা রাখতে হবে।