সরকারের কিছু কর্মকর্তা যে নিজেদের স্বার্থের বাইরে কিছুই ভাবতে পারেন না, তার প্রমাণ এসইডিপি নামের কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তাদের লিয়েনে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি। লিয়েন নিয়ে সরকারেরই প্রকল্পে কাজ করে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষা খাতের প্রকল্পগুলোর সমন্বয় ও দেখভালের জন্য সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রাম (এসইডিপি) নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, উদ্বোধন করা হলেও সে সময়ে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। এই কর্মসূচির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউনিসেফ, ইউনেসকোসহ মোট ছয়টি সংস্থা এই প্রকল্পে সহায়তা দেবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ একাধিক দপ্তরের অধীনে বর্তমানে যে ২৪টি প্রকল্পে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এসইডিপি চালু হলে প্রকল্পগুলো তারাই দেখভাল করবে।
সেখানে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ৩০ জন সরকারি কর্মকর্তার লিয়েন নিয়ে কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তাঁদের বেতন হবে আড়াই লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে প্রত্যেকে পাবেন গাড়ি। কর্মসূচিতে আরো থাকবেন ৫০ জন পরামর্শক। মাত্র দুজন কর্মকর্তার ডেপুটেশনে আসার সুযোগ রাখা হয়েছে।
যেসব প্রকল্প দেখভাল করার জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেসব প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক, পরামর্শকসহ পূর্ণ জনবল আছে। সেখানে লিয়েনে সরকারি কর্মকর্তাদের নেওয়ার পেছনে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। বিশিষ্টজনরা বলছেন, এই কর্মসূচি চালু হলে অন্য প্রকল্পের সঙ্গে ক্ষমতা ও আর্থিক ব্যয়ের দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। এতে প্রকল্পগুলোতে আরো দুরবস্থার সৃষ্টি হবে। এসইডিপি একটি সরকারি প্রকল্প, যদিও সেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আছে। সেখানে কর্মকর্তাদের লিয়েনে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার যুক্তিই নেই। সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি সরকারেরই অন্য কোনো প্রকল্পে যায়, তখন ডেপুটেশনে যায়, এটাই প্রচলিত নিয়ম। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন সংস্থায় গেলে লিয়েনে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এখন যদি কোনো সরকারি প্রগ্রামের কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়, যেখানে লিয়েনে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদেরই যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে তো অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে বলে সন্দেহ হবেই।
এসইডিপির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ ধরনের প্রগ্রাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই এখানে শিক্ষা খাতের অভিজ্ঞ লোক প্রয়োজন হবে। তাই বলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য লিয়েন কেন? ডেপুটেশনে আনা যেতে পারে। আমরা আশা করব, সব কিছু সরকারি বিধি মেনেই করা হবে।