আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুলের দুটি শাখা খুলে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার (১০ই জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা) মো: কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেয়ার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলে সাত দিনের মধ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত লেকহেড গ্রামার স্কুল পর্ষদের সভাপতি হবেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার। সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাদেরও ওই কমিটিতে রাখতে হবে। প্রিন্সিপালও হবেন সেনাবাহিনী থেকে আসা।
লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি করে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়ার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ ৫ ডিসেম্বর এই আদেশ দেন।
স্কুল মালিক ও অভিভাবকদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, পরিচালনা পর্ষদে সেনাবাহিনীর দুজন প্রতিনিধিকে রাখতে বলেছে আদালত। তাদের মধ্যে শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাকে স্কুলের অধ্যক্ষ করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি স্কুলের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করবে।
জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গত বছরের ৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মেহেদী পরদিন ওই স্কুলে গিয়ে সিলগালা করে দেন।
ওই স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন এবং ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যায়। তাদের দুটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৯ নভেম্বর রুল জারি করে।
লেকহেড গ্রামার স্কুলের গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, কেন স্কুলের মালিককে স্কুল খোলা ও পরিচালনা করতে দেয়ার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
১৪ই নভেম্বর ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলটি খুলে দেওয়ার রায় দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।
বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দশ দিন বাড়িয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলে সর্বোচ্চ আদালত। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে আদেশ দেয়।