লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব - Dainikshiksha

লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব

বেলাল হোসেন |

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন থেকে তার শুরু, ’৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-তে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-তে ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ছাত্র রাজনীতি। আরো স্পষ্ট করে বললে ছাত্র সংসদ ও এর নেতাকর্মীরা। যার শিরোমনিতে সবসময় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থান ও এরশাদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ব্যতিরেকে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি পঁচাত্তর ট্রাজেডির সময়েও ছাত্র রাজনীতি তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ নিয়মিত ছাত্র সংসদ থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব তখন থেকেই অনিয়মিত।

সকলেই অবগত যে, দেশের সোনালি ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন একদল প্রাণবন্ত তরুণ। যাদের তেজোদীপ্ত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে দেশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কোথা থেকে, যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই নিয়মিত ছাত্র সংসদ। নেতৃত্ব তৈরির পাইপলাইন হচ্ছে ছাত্র সংসদ, যার অন্য কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিবিদদের বেশিরভাগই উঠে এসেছে ছাত্ররাজনীতি করে। কিন্তু এখন তাদেরই সদিচ্ছার অভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনেক বেশি বিলম্বিত ও অবহেলিত। নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকা, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ইতিবাচক আগ্রহের ঘাটতি, পরিচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে আজ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কি হচ্ছে। গবেষণাপত্র নকল, নিম্নমানের ডিগ্রি, সান্ধ্যকালীন কোর্স, ধর্ষণ, হিংসা, ঘৃণা ইত্যাদি ইত্যাদি। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকলে ছাত্রদের পক্ষ থেকে এগুলো প্রতিহত করা অনেকটা সম্ভবপর ছিলো।

একেকটি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একেক রকম। জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট যেমনই হোক না কেন ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সবদেশেই এক। আর তা হলো জাাতির ভবিষ্যত্ কর্ণধার তৈরি। ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ব্যবস্থা একদিনেই জগৎবিখ্যাত হয়ে যায়নি। ইংল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখলেই তাদের ভবিষ্যত্ জাতীয় রাজনীতির রূপরেখা উপলব্ধি করা যায়। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের ছাত্র সংসদগুলো আমাদের মতো ২৮ বছর ধরে অনিয়মিত এবং অপরিচ্ছন্ন নয়। পৃথিবীর রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার বিপ্লবের মূলশক্তি ছিল ছাত্র সমাজ, রাশিয়াতে ‘জার’ আমলেই ছাত্ররা বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা ঘটায়, এভাবেই ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনায়, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ভেনিজুয়েলায়, ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে কোরিয়ায় এবং ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ভিয়েতনাম ও বলিভিয়ার জাতীয় সংকটে ছাত্র সমাজ দেশ গঠনের আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। তা আজ সর্বজনবিদিত। সমসাময়িক সময়ে এই দেশেও ছাত্র আন্দোলনগুলো গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ তার সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। বর্তমান সময়ে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আর্জেন্টিনা, কোরিয়া, বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম সবদিকেই বাংলাদেশকে ছাড়িয়েছে।

জাতীয় রাজনীতিতে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য এবং ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য। আবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। ছাত্ররাই সব ইতিবাচক আন্দোলনের সূচনা করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির নামে লেজুড়বৃত্তি রাজনৈতিক ধারা অব্যাহতভাবে চলে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ধারায় কোনো সুস্থ, পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না। যার প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। জাতীয় রাজনীতিতে আজ পরিচ্ছন্ন ইমেজের কোনো নেতা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। এমতাবস্থায়, রাজনীতিতে উদীয়মান তরুণ নেতার আবির্ভাবও সম্ভব না। এমনকি জাতীয় রাজনীতি পারিবারিক গণ্ডির মধ্য থেকে বের হতেও পারছে না। কিন্তু আমরা একমনে শুধু বুলি আওড়ে যাই যে ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যত্। আগামী দিনে ছাত্র নেতারাই জাতির নেতৃত্ব দেবে।

আজ আমাদের মাঝে শুধু সুনাগরিক নয় বরং নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন যোগ্য নেতার ব্যাপক অভাব। এটা শুধু একদিনের অভাব নয় দীর্ঘ ২৮ বছরের অবহেলার ফসল। যার দায়ভার শুধু বর্তমান সরকার নয়, সব সরকার ও দায়িত্বশীলদের নিতে হবে।

আশার বাণী হচ্ছে এই যে আগামী ১১ তারিখে হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত দেশের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র নির্বাচন। এই জন্য অবশ্যই বর্তমান সরকার সাধুবাদের প্রাপ্য। দেখা যাক এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে লেজুড়বৃত্তি রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে ছাত্ররা ভবিষ্যত্ নেতৃত্বের জন্য নিজেকে কতটুকু প্রস্তুত রাখতে পারে। গঠনতন্ত্র অনুসারে পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাত্র সংসদের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ। নির্বাচন হয় ভিপি, জিএস ইত্যাদি পদে। এই পদগুলোতে নির্বাচিত ছাত্র নেতারাই যে আগামী বাংলাদেশ গড়বে সেই প্রত্যাশাই করে কোটি কোটি জনতার এই দেশ।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

সূত্র: ইত্তেফাক

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045590400695801